প্রবাসীদের সহজে ভোটার করতে চায় আ.লীগ
আনোয়ার হোসেন-
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার হওয়ার বিষয়টি সহজতর করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দেবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে কেউ দেশে এলে যাতে দ্রুততম সময়ে ভোটার হতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা এবং শান্তি মিশন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ আসতে না পারলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিংবা দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁদের ভোটার করা যায় কি না, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেবে দলটি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে প্রস্তাব ও কৌশল ঠিক করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এই তথ্য জানিয়েছেন। ১৮ অক্টোবর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইসির সংলাপের তারিখ নির্ধারিত আছে। কৌশল ঠিক করতে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা তিন দফা বৈঠক করেছেন। আজ শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই সভায় কৌশল চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের বাইরে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি আছেন। তাঁরা কেউ ভোটার হতে চাইলে বিদ্যমান ব্যবস্থায় তিন মাসেও তা পারেন না। ফলে অনেকেই নিরুৎসাহিত হন। এটা তিন দিনের মধ্যে সম্ভব হলে অনেকেই ভোটার হবেন। দূতাবাস বা অন্য কোনো উপায়ে এটা করা যেতে পারে। ওই নেতা বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে হবে, এটাই মূল নয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভোটার হওয়ার এই অধিকার বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের দেওয়া উচিত। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের সহজে ভোটার করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ইসিতে এই প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। অন্য প্রস্তাব নিয়েও কাজ চলছে। শনিবারের বৈঠকে সব চূড়ান্ত হবে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় এ পর্যন্ত ১৩টি বিষয় প্রস্তাব হিসেবে এসেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ৯টি প্রস্তাব লিখিতভাবে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে আলোচনায় আরও প্রস্তাব ও পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগ।
বিদেশিদের ভোটার করার বাইরে আওয়ামী লীগ যেসব বিষয়ে জোর দেবে, এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনী আসনে সীমানা পরিবর্তন না করা, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) মৌলিক পরিবর্তন না আনা এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি চালু করা।
তবে ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগ আগের জোরালো অবস্থানে নেই বলে দলীয় সূত্র জানায়। তারা মনে করছে, সারা দেশে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটকেন্দ্র হবে। আগামী নির্বাচনের আগে সব কেন্দ্রে ইভিএম যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করা এবং সেই অনুযায়ী ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। তারপরও আওয়ামী লীগ ইভিএমের পক্ষে প্রস্তাব দেবে। বাকিটা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে, ইসি চাইলে সেনাবাহিনীকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে ব্যবহার করার কথা বলবে। তবে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে মত দেবে।
আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আনুষ্ঠানিক এবং লিখিত প্রস্তাবের বাইরে সংবিধান অনুসারে নির্বাচন সম্পন্ন করার ওপর জোর দেবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে যে শেখ হাসিনাই থাকবেন, এটাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ দলীয় একটি সূত্র জানায়, সাবেক ও ভবিষ্যতে অবসরে যাবেন এমন অনেক আমলা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছেন। কিন্তু অবসরের তিন বছরের আগে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার যে বাধ্যবাধকতা আছে, তাতে অনেকেই আটকে যাচ্ছেন। ফলে আমলাদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন কমিশনে চেষ্টা-তদবির চালিয়েছেন। কিন্তু কমিশন থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, আরপিওর এই ধারা পরিবর্তন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রস্তাব আসতে হবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তাঁরা এই ধারা পরিবর্তনের বিপক্ষে।