বার্তা ডেক্সঃঃপ্রবাসী এক নেতার তৎপরতায় ডুবতে বসেছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপি। একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে দলের ত্যাগী নেতারা। ওই নেতার পছন্দের লোককে দলীয় পদে আনা ও নির্বাচনে প্রার্থী করায় একের পর এক বিপর্যয় নেমে আসছে। এতে হতাশ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র ওই নেতা একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিএনপি’রই আরেক নেতা। যিনি এর আগেও পৌর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন।
ওদিকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর পৌরসভার ধানের শীষের প্রার্থী মোর্শেদ আলমের পরাজয় এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া তার বক্তব্য নিয়েও বিএনপিতে চলছে তোলপাড়। বিএনপি বরাবরই দাবি করে আসছিল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব এবং সরকারি দলের আধিপত্যের অভিযোগ বরাবরই করে আসছে দলটির নীতি-নির্ধারণী ফোরামের নেতারা। অথচ, সুনামগঞ্জ সদর পৌরসভার ধানের শীষের প্রার্থী মোর্শেদ আলম ভোটের পরদিন টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। এতে তিনি দাবি করেছেন- ভোট সুষ্ঠু এবং সুন্দর হয়েছে। তিনি নিজের পরাজয়ের জন্য নিজ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের বাড়ি জগন্নাথপুর পৌরসভায় হওয়ায় তিনি এখানে নিজের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে আসছেন। একইসঙ্গে জেলার রাজনীতিতেও তার অদৃশ্য দাপট রয়েছে। অত্যন্ত জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও নিজের ভাই কবীর আহমদকে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক থেকে সরাসরি বিএনপির উপজেলা সেক্রেটারি বানিয়েছেন। কয়ছরের মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ১৬ই জানুয়ারি জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮১৩। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকাও পরাজিত হয়েছে। বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয় বিএনপিকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সাবেক সিনিয়র নেতা আক্তার হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সভাপতি ছিলেন। অতীতে পৌর নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছিলেন একবার। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আবদুস সামাদ আজাদের নির্বাচনী এলাকা ছিল এই জগন্নাথপুর। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিতে এলাকার সম্ভ্রান্ত ও শক্তিশালী পরিবারের সদস্য হিসাবে আক্তার আহমদকে দলে ভিড়ানো হয়। তিনি যোগ দেয়ার পর থেকে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে থাকে। প্রথমে তাকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বানানো হয়। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতেই তিনি একবার পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। কিন্তু ২০১৩ সালে কয়ছর যুক্তরাজ্য বিএনপির সেক্রেটারি মনোনীত হন। এরপর থেকেই জগন্নাথপুরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ- তার কারণেই একে একে বিদায় হতে হয় আক্তার, কর্নেল আলীসহ সিনিয়র নেতাদের। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও এলাকার সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতা আক্তার হোসেনকে সরিয়ে কয়ছর নিজের ছোট ভাইকে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও আলোচনা আছে। কিন্তু ছাত্রদল থেকে সিনিয়রদের ডিঙ্গিয়ে এভাবে সরাসরি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ দিতে কিছুটা বেমানান হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তাই কেন্দ্র থেকে কয়ছরের ভাইকে এক নম্বর সদস্য প্রটোকলে সদস্য সচিব আর কোন যুগ্ম আহ্বায়ক না রেখে কমিটি করা হয় তখন। ওই সময় আহ্বায়ক হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয় কর্নেল (অব.) আলী আহমদকে। কিন্তু তিনিও বেশিদিন টিকতে পারেননি।
আলী আহমদ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক থাকার সময় ২০১৫ সালে পৌর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী দেয়া হয় কয়ছরের ভাই কবিরের বন্ধু রাজু আহমদকে। তখন ধানের শীষে ভোট পায় ৫ হাজার ৭০০। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ী চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বিগত অক্টোবরে। এতেও রাজুকে ধানের শীষ প্রতীক মনোনয়ন দেয়া হয়। গত অক্টোবরে উপ-নির্বাচনে রাজু ধানের শীষ নিয়ে ভোট পান মাত্র ১৩০০। কয়ছরের আধিপত্যে ধানের শীষের ভোট একলাফে ৫ হাজার থেকে নেমে আসে ১৩০০-তে। এই উপ-নির্বাচনে কয়ছরের গ্রামের দুটি কেন্দ্রে ধানের শীষ ভোট পায় যথাক্রমে ২৩ এবং ৮৩।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, কয়ছর ও তার ভাই কবিরের কোন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেই ওই এলাকায় কারো বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল বা অন্য অঙ্গসংগঠন করার সুযোগ রাখা হয় না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দোহাই দিয়ে জগন্নাথপুর ও সুনামগঞ্জে বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি কয়ছরের পছন্দের লোকদের দিয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। জগন্নাথপুর বিএনপির সভাপতি আবু হুরায়রা মানবজমিনকে বলেন, আমরা যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে পারিনি। ফলে বিএনপির ভোটাররা স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তার হোসেনকে ভোট দিয়েছেন। এদিকে বিজয়ী পৌর মেয়র আক্তার হোসেন বলেন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমদ জগন্নাথপুরে পারিবারিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। লন্ডন থেকে তিনি জগন্নাথপুরের বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নিয়ন্ত্রণ করছেন। ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তার নিজস্ব পারিবারিক বলয়ের নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি করেছেন। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপির ওই অখ্যাত প্রার্থীকে মেনে নিতে পারেননি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৯৯ বার