প্রবাসী পরিচয়ে ফেসবুকে প্রেম, নগ্ন ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল
সিলেট:সিলেটের শাহ জাহাঙ্গির আলী (৩২)। দেশের বাইরে জীবনে কোনো দিন পা রাখার সুযোগ হয়নি তার। তবুও শতাধিক নারীর কাছে তিনি একজন প্রবাসী হিসেবেই পরিচিত। অন্য প্রবাসীদের ফেসবুক থেকে ছবি সংগ্রহ করে সেই ছবি দিয়ে বিভিন্ন নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলতেন। আর এসব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেই অনেক নারীর সঙ্গে প্রেম-বিয়ের প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাহাঙ্গির। অবশেষে একজন নারীর দায়ের করা মামলায় শনিবার সিআইডির সাইবার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছেন অনলাইন যৌননিপীড়ণকারী এই ব্ল্যাকমেইলার। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিন জাহান এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি জানান, গতকাল ৩ আগস্ট শাহ জাহাঙ্গির আলী নামক এক ভয়ংকর প্রতারককে মৌলভীবাজার থানা এলাকার সরকার বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের একটি টিম। অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে শারমিন জাহান জানান, আসামি শাহ জাহাঙ্গির আলী প্রথমে প্রবাসী কোনো ব্যাক্তির ফেসবুক আইডি থেকে তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে ভুয়া ফেসবুক আইডি তৈরি করে। এরপর নারীদের ফ্রেন্ড লিস্টে যুক্ত হয়। তখন সে নিজেকে প্রবাসী বলে পরিচয় দিয়ে সেই নারীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। পরবর্তীতে কিছুদিন ভিকটিমদের (নারীদের) সঙ্গে ফেসবুকে তথ্য আদান-প্রদানের পর ওই নারীকে পছন্দ হয়েছে এবং তাকে বিবাহ করতে চায় বলে জানায় জাহাঙ্গীর। সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, এভাবেই পরিচয়কে প্রনয়ের দিকে ধাবিত করে। এমনকি নিজের অভিভাবকদের দেখানোর কথা বলে ওই নারীর এবং তাদের পরিবারে ছবিও সংগ্রহ করে সে। এরমধ্যে যেসব নারীদের সঙ্গে তার ভালবাসার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়, বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে অত্যন্ত সুকৈাশলে তাদের খোলামেলা ছবি সংগ্রহ করে জাহাঙ্গীর। যদি ছবি সংগ্রহে ব্যর্থ হয় তবে ছবি এডিটিং করে অশ্লীল ও নগ্ন ছবি তৈরি করে সেই নারীর।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, নারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার একপর্যায়ে জানায় যে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিয়ে সে দেশে এসেছে। এরপর তার বাবার অসুস্থতার বা অন্য কোনো সমসার কথা বলে ওই সব নারীদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে জাহাঙ্গীর। যে সব নারী টাকা দিতে রাজি হয় না তাদের নাম দিয়ে ভুয়া আইডি তৈরি করে ভিকটিমদের (নারীদের) নগ্ন ছবি প্রকাশ করে। এ ছাড়া ওই নারীদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ইনবক্সে ছবিগুলো দিয়েও টাকা দাবি করে। শুধু মাত্র তাই নয়, একাধিক ভুয়া আইডির মাধ্যমে ওই নারীর বিভিন্ন ছবি ভাইরাল করে দেবার হুমকিও দেয় সে। এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে উক্ত নারীদের কাছে থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আদায় করত জাহাঙ্গীর। সিআইডি জানায়, আসামি জাহাঙ্গীরের একাধিক ফেসবুক আইডি পর্যালোচনা করে শতাধিক ভিকটিমের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায়। যারা কোনো না কোনোভাবে এই আসামির দ্বারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দায়ের করা মামলায় আসামি শাহ জাহাঙ্গীর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।সৌজন্যে:আমাদেরসময়