প্রবাসী প্রার্থীদের ঘিরে সরগরম সিলেটের ভোটের মাঠ
ওয়েছ খছরু-
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটের ভোটের মাঠে নেমেছেন একডজন প্রবাসী প্রার্থী। তাদের নির্বাচনী ডামাডোলে অনেক আসনে ঘুম হারাম হয়ে গেছে দলীয় সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীদের। প্রবাসীদের নিয়ে সরব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও। কোথা কোথাও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। সিলেটের রাজনীতিতে প্রবাস ও স্বদেশের রাজনীতির মেলবন্ধন রয়েছে। প্রবাসে থাকলেও দেশের রাজনীতি ও ভোটে প্রভাব থাকে প্রবাসীদের। এ কারণে ভোটের আগে অনেক প্রার্থী লন্ডনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য সিটিগুলোতে বাংলাদেশিদের কাছে ভোট চাইতে চলে যান। সিলেটের ৬টি সংসদীয় আসনে গেল সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন দু’জন প্রবাসী প্রার্থী। এর আগের সংসদেও সিলেট থেকে প্রবাসী হিসেবে ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। সুতরাং সিলেটের রাজনীতিতে সবসময়ই বড় ফ্যাক্টর প্রবাসী প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে কেবল ব্যতিক্রম মর্যাদাপূর্ণ সিলেট সদর আসন। এ আসনে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে পারেননি। তবে- জেলার অপর ৬টি আসনের মধ্যে প্রতিটিতেই প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক প্রবাসী প্রার্থী রয়েছেন। যাদের কেউ কেউ দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সিলেট-২ আসনে রয়েছে প্রবাসী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। গেল দুটি জাতীয় সংসদে এই আসনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রবাসী প্রার্থীরা। প্রথম নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী। আর বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বতর্মান এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া। এই দুই জনের বাইরে এবারের নির্বাচনে বেশ জোড়েশোরে ভোটের মাঠে নেমেছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ভোটের প্রস্তুতি নিতে তিনি প্রায় ১৫ দিন আগে সিলেটে এসেছেন। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে ওই আসনে আওয়ামী লীগের বলয়ে নতুন করে উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামানের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে সিলেট-২ আসনে বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন নৌকার ভোটাররা। এ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী। তিনি গুম হওয়ার পর তার পত্নী তাহসিনা রুশদী লুনা হাল ধরেছেন এলাকায়। ইলিয়াসের ভাই প্রবাসী আছকির আলী এ আসনে প্রার্থী হতে চাইছেন বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। সিলেট-৩ আসনেও প্রবাসী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। যারা ইতিমধ্যে ওই আসনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ থেকে রয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সমাজসেবা সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি গেল সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে ভোটের মাঠে সক্রিয়। কয়েকমাস ধরে দেশে অবস্থান করে তিনি গোটা আসনে উঠোন বৈঠক করে চলেছেন। তার এই কার্যক্রমের কারণে তৃণমূলে চাঙা হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি থেকে কেন্দ্রীয় নেতা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিস্টার আব্দুস সালামও গেল দুই নির্বাচন থেকে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। লন্ডনে অবস্থান করলেও এলাকায় তার পক্ষে বিএনপির একটি পক্ষ সরব রয়েছে। ব্যারিস্টার সালামের আলাদা ইমেজ রয়েছে নির্বাচনী আসনে। সিলেট-৪ আসনেও প্রবাসী প্রার্থী রয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা ইতিমধ্যে ব্যাপক আলোচনায় এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ফারুক আহমদ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে থেকে মাঠে সক্রিয় রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন এলেই তিনি মনোনয়নের দাবি নিয়ে দেশে আসেন। কিন্তু এখনো তার ভাগ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জোটেনি। এরপরও হাল ছেড়ে দেননি ফারুক আহমদ। নির্বাচনকে সামনে রেখে গেল দুটি ঈদে তার পক্ষে এলাকায় পোস্টারিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হয়। সিলেট বিএনপির সিনিয়র নেতা অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিক হলেও তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসী। অর্ধশতাধিক মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে জামান বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় সিলেট থেকে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। গত সংসদ নির্বাচন থেকে জামান সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন চাচ্ছেন। এবার জামান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তার বলয়ের নেতারা। সিলেট-৫ আসনের বর্তমান এমপি হুইপ সেলিম উদ্দিনও প্রবাসী। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে তিনি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এ আসনে ফ্রান্স জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদও মনোনয়ন চাচ্ছেন। সিলেট-৬ আসনে প্রধান দুটি দলে প্রবাসী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি বেশি। এর মধ্যে রয়েছেন- কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি শামস উদ্দিন খান ও লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আফসার খান সাদেক। কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ওই সংসদীয় আসনে তিনি আলাদা ইমেজ তৈরি করেছেন। গেল বন্যায় নিজের তহবিল থেকে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে বানভাসী মানুষের নজর কেড়েছেন। সরওয়ার হোসেনের পক্ষে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারের আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশের নেতারা মাঠে সক্রিয়। এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী যুক্তরাজ্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফয়সল আহমদ চৌধুরী। ফয়সল আহমদ চৌধুরী বর্তমানে দেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির ওই নেতা গেল বন্যায়ও ঘরে ঘরে ত্রাণ দিয়েছেন।