ওসমানী হাসপাতাল প্রাঙ্গন জুড়ে ছিল সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে শুরু করে হাসপাতালের মুল বিল্ডিংয়ের সামনে জুড়ে ছিল প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের অবৈধ স্ট্যান্ড। কয়েকশ’ অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতো হাসপাতাল প্রাঙ্গনে। প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা সিন্ডিকেট রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করতেন ভাড়া। তাদের দৌরাত্মের কারণে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বঞ্চিত ছিলেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনের এই সিন্ডিকেট গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে অবশেষে। বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে হাসপাতালের ভেতর থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ড ও পার্কিং উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সিলেটের সচেতন মহল।
স্বল্পমূল্যে ভাড়া মিলে ওসমানী হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স। কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নেয়া হয় মাত্র ১০ টাকা। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের এই সেবা পাচ্ছিলেন রোগীরা। রোগীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা বাগিয়ে নিতেন। আদায় করতেন তাদের মনগড়া ভাড়া। এ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। প্রায়ই হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছিল। অ্যাম্বুলেন্সের সিন্ডিকেটটি এতোই শক্তিশালী যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনেক সময় উদ্যোগ নিয়েও তাদেরকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। উপরন্তু হাসপাতাল প্রাঙ্গনকে তারা নিজেদের স্ট্যান্ড বানিয়ে ব্যবহার করছিল। সারিবদ্ধভাবে কয়েকশ’ অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রাখা হতো হাসপাতালের সামনে।
গত মঙ্গলবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারত সরকারের দেওয়া দুটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স অব্যবহৃত পড়ে থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সাধারণ মানুষকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করার পরামর্শ দেন।
এরপরই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের। অবশেষে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটে মো. মেজবাহ উদ্দিন অভিযান চালান ওসমানী হাসপাতাল প্রাঙ্গনে। অভিযানকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রায়ান বঙ্কিম হালদারও উপস্থিত ছিলেন। এসময় হাসপাতাল প্রাঙ্গন থেকে বের করে দেয়া হয় সকল প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স।
এছাড়া প্রধান ফটকের ভেতরে দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও মোটর সাইকেল পার্কিং স্ট্যান্ডও উচ্ছেদ করা হয়। দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালের প্রধান ফটকের ভেতরে অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তুলে টিকেট কেটে পার্কিং ফি আদায় করছিল একটি মহল। এমনকি তারা হাসপাতালের ভেতরে পার্কিং শেডও তৈরি করে। বৃহস্পতিবার অভিযানকালে এই শেডও ভেঙ্গে ফেলা হয়।
এ প্রসঙ্গে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, হাসপাতাল প্রাঙ্গন থেকে অবৈধ অ্যাম্বুলেন্স এবং সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো অভিযান হিসেবে কাউকে জরিমানা করা হয়নি। তবে আগামীতে কেউ এরকম অবৈধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৪৪ বার