প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশনা
প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা জেলার প্রাইমারী শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময়ের সময়ে এসব নির্দেশনা দেন তারা। আকরাম আল হোসেন ভিডিও কনফারেন্সেই স্থানীয় ই্উএনওদের নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেসব শিক্ষকরা আগামী দুই মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন তাদের ডাটা বেইজ তৈরি করুন। কোনো শিক্ষক পেনশন পেতে হয়রানির শিকার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, শিক্ষকেদের পদোন্নতি শিগগিরই হবে। এ ক্ষেত্রে যে জটিলতা আছে তা দুই একদিনের ভেতর কেটে যাবে। সচিব শিক্ষকদের সকাল ৯টার মধ্যে অবশ্যই স্কুলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষার ওপরেও জোর দেন তিনি।প্রাথমিক স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা হবে এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ জাকির হোসেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন, জাতি এবং দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। হারাম খাবেন না। আপনারা সরকারকে সহায়তা করুন, সরকার আপনাদের সহায়তা করবে।’ জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক স্কুল থেকে বাচ্চারা যেন আর কিন্ডারগার্টেনে বা কেজি স্কুলে না যায় সেই ব্যবস্থা করা হবে। প্রাইমারি স্কুলের মান বাড়ানো গেলে কেজি স্কুলের বাচ্চারা প্রাইমারি স্কুলে পড়তে আসবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির ক্ষেত্রে আমরা জিরো টলারেন্স। আপনাদের অভাব থাকলে সরকার তা পূরণ করবে। শিক্ষকরাই পারেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। শিক্ষকরাই পারেন ভালো জাতি উপহার দিতে আবার শিক্ষকরাই পারে জাতিকে ধ্বংস করে দিতে।’ শিক্ষকদের অনেক সমস্যা আছে উল্লেখ করে জাকির হোসেন বলেন, ‘এসব সমস্যা উদঘাটন করে সমাধান করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার মান ভালো না বলে শিক্ষার্থীরা কেজি স্কুলে যাচ্ছে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় তা আপনাদের ভালো ভূমিকার ওপর নির্ভর করবে। ছেলেমেয়েদের নিজের সন্তানের মত করে দেখুন। এটি আপনাদের কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ।’ শিক্ষকদের সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে এবং নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হালাল রুজি করতে চাই, হালাল খেতে চাই। আমাদের দায়িত্বগুলো যাতে আমরা অন্তত পালন করি। আমরা সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে চাই, ঠিক সময়ে স্কুল থেকে আসতে চাই। আমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল শিক্ষা দিতে চাই। যাতে তারা নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি সরকারি কর্কচারী-কর্মকর্তা না, আমি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত লোক, সরাসরি আমার সাথে টেলিফোনে কথা বলবেন। আমার দরজা সকলের জন্য খোলা থাকবে। যে কোনও সমস্যা নিয়ে, আমার বিরুদ্ধে হলেও আমাকে বলবেন। ভবিষ্যতে যেন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা আপনার স্কুলে যেতে চায়, আপনার স্কুলের ছেলেরা কিন্ডারগার্টেনে যাতে না যায়।’ শিশু শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা কমানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চার পক্ষে ওতোগুলো বই নিতে ওদের কষ্ট হয়। আমরা চাচ্ছি মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলে বইয়ের ভার কমবে।’ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি লক্ষ্য করেছি আপনাদের বদলি নিয়ে টিও অফিসে ঝামেলা হয়। অনেক দালাল আপনাদের পেছনে লাগানো আছে। আমি এগুলো টলারেট করবো না। কোনও শিক্ষা কর্মকর্তা যদি শিক্ষকদের হয়রানি করেন, আমি তাদের মার্সি করবো না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের মাথা তারা যেন নষ্ট করতে না পারে। আমি দেখছি এই শিক্ষককে এখানে বদলি করে, ওখানে বদলি করে। এর ভেতর দিয়ে টাকা-পয়সাও নেওয়া হয়। আবার শিক্ষকদের ভেতরে কিছু শ্রেণি আছে তারা আবার টিও সাহেবের বগলে সুন্দরভাবে বসে আরেক শিক্ষকের ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করে।’