ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে:

প্রেমিক মখনের সঙ্গে রোশনার কু-কর্ম দেখে ফেলেছিল মেয়ে রুলি বেগম। পরপুরুষের সঙ্গে মায়ের একান্ত মিলনের দৃশ্যটি দেখে জানায় প্রতিবাদ। মাকে করে তিরস্কারও। সেই থেকে মেয়ের উপর ক্ষুব্ধ ছিল রোশনা। প্রেমিক মখনকে নিয়ে করে খুনের পরিকল্পনা। এরপর হাওরের অথৈ জলে রোশনার সামনেই মেয়ে রুলি ও স্বামী আব্দুস সালামকে খুন করে মখন ও তার সহযোগীরা। এখানেই শেষ হয়নি ঘটনা। আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার পর রোশনা প্রেমিক মখনের সঙ্গেই ঘর সংসার শুরু করে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের হাওর এলাকা পুটামারার ঘটনা এটি। ঘটনার ৮ মাসের মাথায় সিলেটের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে। একই ছাদের নিচ থেকে গ্রেপ্তার করেছে মা রোশনা বেগম ও তার প্রেমিক মখন মিয়াকে। আর গ্রেপ্তারের পরপরই রোশনা পুলিশের কাছে মুখ খুলেছে। আদালতেও খুনের ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। রোশনা প্রথমে পুলিশের কাছে এবং পরে আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে ঘটনার আদি-অন্ত জানায়। বলে- একই গ্রামের মখন মিয়ার সঙ্গে তার স্বামী আব্দুস সালামের সু-সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কারণে  মখন মিয়া প্রতিদিনই আব্দুস সালামের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতো। এই সুযোগে মখনের সঙ্গে রোশনা বেগমের শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন রোশনার প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে রুলি বেগম মখনের সঙ্গে রোশনার একান্ত মিলনের দৃশ্য দেখে ফেলে। মায়ের এই অধঃপতনের প্রতিবাদ করে রুলি বেগম। বিষয়টি রুলি তার বাবা ও আশপাশের লোকজনকে জানিয়ে দিতে পারে- এমন আশঙ্কায় মখনই রোশনাকে পরামর্শ দেয় তার স্বামী ও মেয়েকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে। সেই পরিকল্পনা মতো রোশনা স্বামী আব্দুস সালাম ও মেয়ে রুলি বেগমকে নিয়ে গত বছরের ১৩ই আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ যায়। তেলিখাল হয়ে নৌকাযোগে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায় তাদের। হাওরের টাইয়া পাগলা নামক স্থানে আসামাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অপর একটি নৌকা দিয়ে গিয়ে মখন তার সহযোগী গনু মিয়া, মনাফ ও ইলিয়াছ মিয়া হামলা চালায় আব্দুস সালামের নৌকাতে। মেয়ে রুলি বেগমের ওপর হামলার সময় এগিয়ে আসেন পিতা আব্দুস সালাম। এ সময় আব্দুস সালামের মাথায় বৈঠা দিয়ে আঘাত করা হলে তিনি নৌকা থেকে হাওরের পানিতে পড়ে যান। এরপর মেয়ে রুলি বেগমকে তাদের নৌকায় তুলে নিয়ে যায় মখন ও তার সহযোগীরা। ঘটনার পরদিন রুলি ও তার পিতা আব্দুস সালামের লাশ টাইয়াপাগলা হাওরে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রুলির শরীরে ছিল আঘাতের চিহ্ন। এদিকে- ঘটনার পর রোশনা নিজেই তার ভাইকে ফোন দিয়ে জানিয়েছিল, ‘ডাকাতি হয়েছে। স্বামী আব্দুস সালাম ও মেয়ে রুলি বেগমকে খুঁজে পাচ্ছেন না।’ অথচ নৌকায় হামলার সময় রোশনা বেগম নিজেও ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। এ ঘটনায় রোশনা ভাসুরসহ প্রতিবেশীদের জড়িয়ে স্বামী ও মেয়ে হত্যা মামলা করে। পুলিশ ঘটনার দিনই ভাসুরের বাড়ির দুই মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছিল। এদিকে- ঘটনাটিকে চাঞ্চল্যকর বলে পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে তদন্ত দেওয়া হয়। পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন মামলাটির দায়িত্ব গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই শুরু থেকেই মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী রোশনাকে সন্দেহের মধ্যে রাখছিল। তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই গণু মিয়া ও ইলিয়াছ মিয়াকে আটক করে। তাদের আটকের পরপরই মামলার মোড় ঘুরে যায়। দুইজনের কাছ থেকে নতুন তথ্য উদঘাটিত হয়। আটককৃতদের মধ্যে ইলিয়াছ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আর ওই দুইজন আটকের পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। গত ১০ই এপ্রিল কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ উত্তরপাড়ার চান মিয়ার বাড়ি থেকে রোশনা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক মখন মিয়াকে একই কক্ষ থেকে আটক করা হয়। পিবিআই রোশনা ও মখনকে আটক করার পর দিনই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আর মখনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। পিবিআইর ইন্সপেক্টর আবুল হোসেন জানিয়েছেন- রোশনা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। প্রেমিক মখনকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটানোর কথা সে স্বীকার করেছে বলে জানায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn