সুফিয়ান আহমদ-

চার বৎসর পূর্বে বন্ধুদের মাধ্যমে সমুনের সাথে জেরিনের (ছদ্মনাম) পরিচয়। একজন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। অপরজন রাগীব-রাবেয়া নার্সি কলেজের শিক্ষার্থী। একজনের বাড়ি বড়লেখা’র কাঠালতলীতে আর অপরজনের বাড়ি জকিগঞ্জের বরণ এলাকায় হলেও তারা উভয়েই থাকতেন সিলেটে।
বন্ধুদের মাধ্যমে পরিচয়ের পর থেকে একে অপরকে জানাশুনা, তারপর প্রেম। এই চাঁর বৎসরে তারা কাটিয়েছেন অনেক মধুর মুহুর্ত। ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়। ততদিনে তাদের সম্পর্কটা গভীর থেকে হয়েছে গভীরতর। প্রায় প্রতিদিন একজন আরেকজনের সাথে দেখা না হলে থাকতে পারতেন না। এমনকি তারা একসাথে একই প্রতিষ্টানে চাকুরী পর্যন্ত করেছেন। প্রেমিকার বেশ কয়েকটি বিয়েও ভেঁঙ্গেছেন সুমন।
কিন্তু হঠাৎ করে তাদের মধ্যে দেখা দেয় মনোমালিন্যতা। প্রেমিক সুমন ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেন প্রেমিকার কাছ থেকে। এর একমাত্র কারণ আমেরিকা প্রবাসী এক সুন্দরী ললনা। বিয়ানীবাজার পৌরশহরের পূর্ব নয়াগ্রামের বাসিন্দা ওই আমেরিকা প্রবাসী মেয়ের সাথে পারিবারিকভাবেই সুমনের পরিবারের বিয়ের কথাবার্তা চলে আসছিল । যার কারণে সুমন তার প্রেমিকার কাছ থেকে আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকলে টের পান প্রেমিকা জেরিন ।
একপর্যায়ে প্রেমিক সুমন তাঁর বিয়ের বিষয়টি জেরিনকে বলতে বাধ্য হলে জেরিন এবিষয়ে সুমনের বাবা ও ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। কিন্তু এতে কোন কাজ হয় নি। সুমনও এবিষয়ে তাঁর পরিবারকে কিছু বলে নি।
গতকাল শুক্রবার সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর দেলওয়ার হোসেন সজীবের কার্যালয়ে প্রেমিকা জেরিন ও প্রেমিক সুমনের পরিবারের বৈঠক ছিলো। কিন্তু ওই বৈঠকে প্রেমিক সুমন না আসায় এতে উপস্থিত হন নি জেরিনও।
শনিবার ছিলো আমেরিকা প্রবাসী মেয়ের সাথে প্রেমিক সুমনের বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণের দিন। এউপলক্ষ্যে কন্যার বাড়িতে আয়োজন করা হয় এক অনুষ্টান। সকালে বোরকা পরিহিতা এক মেয়ে গিয়ে হাজির হয় ওই বাড়িতে। সে কনের বাবা ও পরিবারের লোকজনকে প্রেমিক সুমন ও তার মধ্যকার চাঁর বৎসরের প্রেমময় মধুর জীবনের সবকিছু বিস্তারিতভাবে বলে। বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও দু’জনার মধ্যকার ছবিও দেখায় জেরিন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। উল্টো তারা ধমক দিয়ে তাকে বের করে দিতে চাইলে, সে বের হয়ে না আসতে চাইলে পুলিশে খবর দেন ওই মেয়ের পরিবার।
পরে পুলিশ গিয়ে জেরিনকে থানায় নিয়ে আসে। খবরটি বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয় চারদিকে। একপর্যায়ে বিষয়টি আমেরিকা প্রবাসী কন্যার বাবার কানে চলে গেলে নড়েচড়ে বসেন তারাও। প্রেমিক সুমনের পরিবারের লোকজন ও মুরুব্বীরা কনের বাড়ি নয়াগ্রামে আসলে তাদের সাথে কোন আলাপ-আলোচনা না করেই, দুপুরের খাবার খাইয়ে তাদের বিদায় দিয়ে দেয়া হয়। যার ফলে ভেঙ্গে যায় তাদের বিয়ে।
এবিষয়ে প্রেমিক সুমনের বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি উল্টো জেরিনকে দোষী সাব্যস্ত করে, এঘটনার জন্য জেরিনকেই দায়ী করেন।
তবে জেরিন বলেন, কাউন্সিলর সজিবের কার্যালয়ে সুমনকে ছাড়াই বসতে চেয়েছেন, যার জন্য আমি যাই নি। তিনি বলেন, চাঁর বৎসর পূর্বে সুমনের সাথে বন্ধুর মাধ্যমে আমার পরিচয়। তখন সে নিজেকে এম.বি.বি. এস চিকিৎসক পরিচয় দেয়। শুনেছি ওই পরিবারের কাছেও সে চিকিৎসক পরিচয় দিয়েছে। আমার সাথে সে প্রতারনা করেছে চিকিৎসক বলে। আমি চাইনা আর কেউ প্রতারিত হোক। তাছাড়া তাঁর সাথে আমার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি ও ডকুমেন্ট রয়েছে, সেগুলো সে ও তার পরিবার কিভাবে অস্বীকার করবে।
সন্ধ্যার পর প্রেমিকা জেরিনের মায়ের জিম্মায় জেরিনকে দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, যেহেতু প্রেমিক জকিগঞ্জর আর প্রেমিকা বড়লেখা উপজেলার তাই এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তাদের সম্পর্ক হয়েছে সিলেটে। আর তারাও অন্য দু’উপজেলার বাসিন্দা। তাই এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। আমি মেয়েটিকে বলেছি, এবিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সে যেন জকিগঞ্জ থানায় দারস্থ হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn