প্রেম করে বিয়ে, অতঃপর মেয়ে জামাইকে গাছে বেঁধে নির্যাতন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া প্রেম করে বিয়ে করায় মধ্যযুগীয় কায়দায় গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে নাসিরুল ইসলাম (২১) নামক এক যুবককে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ভাংবাড়ি গ্রামে ওই গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নাসিরুল ওই গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। ঘটনাটি প্রথমে চাপা থাকলেও গত ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ফেসবুক মাধ্যমে এই ঘটনার ভিডিওচিত্র প্রকাশ হলে তা অনেকের নজরে আসে। নাসিরুল ইসলাম দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এই ঘটনার পর নাসিরুলের বাবা খয়রুল ইসলাম থানায় মামলা করলে অভিযুক্ত শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত শাশুড়ির নাম শিরিনা আক্তার (৪২)। তিনি উপজেলার ভাংবাড়ী গ্রামের করিমুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানায়, একই এলাকার করিমুলের মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই যুবকের। দীর্ঘদিন সম্পর্ক থাকার পর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এক পর্যায়ে পরিবারকে না জানিয়ে তারা বিয়ে করে আত্মগোপনে থাকেন। এদিকে মেয়ের পরিবার থেকে ছেলের পরিবারকে মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বিয়ে মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় মেয়ের পরিবার। কিন্তু মেয়ের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ছেলের পরিবার ভয় পেলে ছেলেকে ফিরে আসার আকুতি জানায়। মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে ছেলেও মেয়েকে পরিবারের কাছে দিয়ে আসে। পরে ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাসায় যান ওই যুবক। তখনই প্রেম করে বিয়ে করায় মেয়ের বাবা-মা তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করতে থাকেন। ওই যুবক চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানান, বারবার ক্ষমা চায়। তবুও তাকে মারধর করতে থাকে মেয়ের পরিবার। শেষে পুলিশ গিয়ে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শাওন আমিন নামে এক ব্যক্তি নির্যাতনের ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করলে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে অভিযুক্ত শাশুড়িকে আটক করে পুলিশ। তারপর ছেলের বাবা মামলা করলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
স্থানীরা আরও জানায়, করিমুলের নাবালিকা মেয়ে কেয়া মনিকে (১৬) নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে নাসিরুল। পরে করিমুলের পরিবার কৌশলে মেয়ে ফিরিয়ে নেয় নাসিরুলের কাছ থেকে। এই বিয়ে মানতে রাজি না থাকায় করিমুলের পরিবার এমনটি করেছে। রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদ ইকবাল বলেন, নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পরেই শুক্রবার দুপুরে শিরিনা আক্তার নামে ওই নারীকে আটক করা হয়। পরে নাসিরুলের বাবা ৪ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এতে শিরিনা আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাকে শনিবার আদালতে হাজির করা হবে। নির্যাতনকারী অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকে (সুজন) ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, প্রেমঘটিত ও বিয়ের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ছিল মেয়ের পরিবারের। তা না করে কৌশলে বাড়িতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের বিষয়টি অমানবিক। সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ প্রশাসন এমনটাই প্রত্যশা করছি।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৩ বার