ফেডারেশন কাপ দিয়ে ফুটবল মৌসুম শুরু আজ
বার্তা ডেক্সঃঃকরোনাকালে ফেডারেশন কাপ দিয়েই প্রথম মাঠে গড়াচ্ছে ঘরোয়া ফুটবল। আজ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে সি গ্রুপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের মুখোমুখি হচ্ছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় শুরু হবে এই ম্যাচ। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে ক্লাবগুলো। ধারে ভারে এগিয়ে থাকা বসুন্ধরার কোচ অস্কার ব্রুজনের চাইছেন শিরোপা ধরে রাখতে। হারানো শিরোপা ফিরে পেতে মরিয়া ঢাকা আবাহনী। দীর্ঘদিন শিরোপা খরায় থাকা মোহামেডানের প্রত্যাশা ফেডারেশন কাপ ঘরে তোলার।
আবার একদিন আগে ট্রেনিং শুরু করা ব্রাদার্সও চায় ভালো করতে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলে নাম লেখানোর পর থেকেই যেন শিরোপার সঙ্গে সন্ধি করে নিয়েছে বসুন্ধরা কিংস! দুই মৌসুম মিলিয়ে এখন পর্যন্ত একটি লীগ ও তিনটি টুর্নামেন্ট খেলেছে ক্লাবটি। প্রথম ফেডারেশন কাপে হয়েছে রানার্সআপ। এরপর লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই যে শিরোপার হাত ধরে হাঁটা শুরু, জিতেছে স্বাধীনতা কাপ ও গত মৌসুমের ফেডারেশন কাপ শিরোপা। এবারের মৌসুমেও এই রাজত্ব ধরে রাখতেই মাঠে নামছে বলে জানিয়েছেন দলের হেড কোচ অস্কার ব্রুজন। গতকাল টুর্নামেন্ট নিয়ে তার দলের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এএফসি কাপকে সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে অনুশীলন শুরু করেছিলাম। এএফসি কাপ বাতিল হলেও আমরা ট্রেনিং বন্ধ করেনি। আশা করছি এর সুফল আমরা ফেডারেশন কাপ দিয়েই পেতে শুরু করবো।’ নতুন দল গড়ার ক্ষেত্রেও বসুন্ধরার লড়াই শুধু নিজেদের সঙ্গেই। এবার স্থানীয় ফুটবলারদের দল বদলের সুযোগ ছিল না। বসুন্ধরার চোখ ছিল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়। চার বিদেশির দুজন ব্রাজিলিয়ান ও একজন আর্জেন্টিনার। এশিয়ান কোটা পূরণ করা হয়েছে ইরান থেকে খেলোয়াড় এনে। ফেডারেশন কাপে এসব বিদেশির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি শিরোপায় চোখ রাখতে চাইছেন দলটির নতুন অধিনায়ক তপু বর্মন।
২০১৬ থেকে গত ৪টি ফেডারেশন কাপের প্রথম ৩টিতেই আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। সর্বশেষ টুর্নামেন্টটি অবশ্য বসুন্ধরা কিংসের। ২০০৭ সালে শুরু হওয়া পেশাদার লীগে প্রথম ১০ আসরে ৬ বারই সেরা আবাহনী। নতুন মৌসুমে ঢাকা আবাহনীর আপাতত লক্ষ্য পরিত্যক্ত মৌসুমে বসুন্ধরা কিংসের কাছে হারিয়ে ফেলা ফেডারেশন কাপের শিরোপা পুনরুদ্ধার। দলের হেড কোচ মারিও লেমস তেমন আশার কথা জানিয়ে বলেন, ‘যদিও আমরা ফেডারেশন কাপে কঠিন একটা গ্রুপে পড়েছি। কিন্তু ছেলেরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত আছে। তবে বসুন্ধরার প্রবল দাপট এড়িয়ে লক্ষ্যে পৌঁছা কঠিন আবাহনীর জন্য। তাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ১৩-১৪ জন, আর আবাহনীতে ৬-৭ জন।’ তবে নতুন মৌসুমে বসুন্ধরার দানিয়েল কলিনদ্রেসের মতো বিশ্বকাপে খেলা আলোচিত তারকা নেই। আবাহনীর জন্য এটা স্বস্তির। কোনো দেশি খেলোয়াড় ছাড়েনি আবাহনী, নেয়নি নতুন কাউকেও। নতুন মৌসুমে দেখা যাবে পুরোনো আবাহনীকেই। তবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানিকে। নতুন সংযোজন দুই ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো তোরেস ও রাফায়েল আগস্তো। দুজনকেই ভাবা হচ্ছে আবাহনীর বাজি। তারা ভালো খেললে ফেডারেশন কাপ ও লীগ শিরোপা পুনরুদ্ধার কঠিন হবে না বলে জানিয়েছেন দলটির এই পর্তুগিজ কোচ।
১৩ দলের টুর্নামেন্টে শক্তিশালী ঢাকা আবাহনীর গ্রুপে পড়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান। সামপ্রতিক সময়ে নেতিবাচক খবরের শিরোনামেই বেশি এসেছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি। দলের যে অবস্থা তাতে শিগগিরই ভালো কোনো শিরোনামে আসার সম্ভাবনাও কম। একঝাঁক অখ্যাত তরুণ নিয়ে গড়া গতবারের দলটা খেলছে এবারও। অবশ্য উন্মুক্ত দলবদল না থাকায় এ মৌসুমে চাইলেও তারকা ফুটবলার নিতে পারেনি সাদা-কালোরা। এরপরেও দলের অস্ট্রেলিয়ান কোচ শন লেনের প্রত্যশা তরুণরা তাকে ভালো কিছুই উপহার দিবে। গতকাল টুর্নামেন্ট পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমার দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় তরুণ। আমি তিন-চার সপ্তাহের ট্রেনিংয়ে এদের তৈরী করেছি ফেডারেশন কাপের জন্য।’
বড় তিন ক্লাবের বাইরে সাইফ স্পোটিং ক্লাব, শেখ জামালও চোখ রাখছে শিরোপায়। আরামবাগ ও রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির লক্ষ্য গ্রুপ পর্বের হার্ডল পেরোনো। তবে একেবারে ভিন্ন লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের লঙ্কান কোচ নিজাম পাকির আলী। তিনি বলেন, তার দলে প্রচুর তরুণ প্রতিভাবন ফুটবলার আছেন। সেখান থেকে কয়েকজনকে তিনি জাতীয় দলের জন্য তৈরী করতে চান এই টুর্নামেন্টের মধ্যদিয়ে। আর্থিক সংকটের মধ্যে ফেডারেশন কাপে নিজেদের প্রস্তুত করেছে মুক্তিযোদ্ধা। আর টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন ট্রেনিং শুরু করে পঞ্চম হওয়ার আশা করছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। সংবাদ সম্মেলনে না আশায় চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ রাসেলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কথা জানা যায়নি।
ফেডারেশন কাপে কে কোন গ্রুপে
গ্রুপ ‘এ’- শেখ রাসেল, শেখ জামাল ও বাংলাদেশ পুলিশ
গ্রুপ ‘বি’- সাইফ স্পোর্টিং, আরামবাগ, ব্রাদার্স ইউনিয়ন এবং উত্তর বারিধারা।
গ্রুপ ‘সি’-বসুন্ধরা কিংস, চট্টগ্রাম আবাহনী ও রহমতগঞ্জ
গ্রুপ ‘ডি’-আবাহনী, মোহামেডান ও মুক্তিযোদ্ধা