ফের ক্ষমতায় মোদী সরকার : কী প্রত্যাশা করতে পারে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ কী প্রত্যাশা করতে পারে?
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, এখন ভারতে নতুন সরকার গঠন হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাত্রায় তেমন পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশকে এখন ভাবতে হবে কিভাবে সে সম্পর্কে আরো গতি আনা যায় “এখানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যখন সরকার গঠন হলো, তখন কংগ্রেস ক্ষমতায়, সে সময় যে বিষয়গুলো নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, বিজেপির আমলে তার ফলাফল দেখতে পেয়েছি আমরা।” এখন বিজেপি পুনরায় সরকার গঠন করলে, দুই দেশের মধ্যে যেসব দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সহযোগিতা চলমান আছে, তার ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে বলে মনে করেন তিনি। তবে, তিনি মনে করেন “বাংলাদেশের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলো, যেমন বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়গুলো। গত মেয়াদে অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বললেও মোদী সরকার ততটা অগ্রগতি করতে পারে নাই।” ”হয়ত এবারে নতুন দফায় সেদিকে অগ্রগতি হবে, সে আশা করা যায়। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বলেন, আর বাণিজ্য বৃদ্ধি বলেন, আমাদের দেখতে হবে কিভাবে সেটা বাড়ানো যায়।” গত এক দশকে নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের যেসব উদ্বেগের জায়গা ছিল, বাংলাদেশ সেসব ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করেছে, সেটা দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা বাড়িয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রদূত মিঃ কবির বলছেন, সে আস্থা আর সুসম্পর্ক থেকে উভয় দেশই লাভবান হচ্ছে, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে দুই দেশকে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে কি শীঘ্রই হতে পারে?
কিন্তু গত এক দশকে দুই দেশের সম্পর্কে অনেক অগ্রগতি হবার পরেও তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি বণ্টনসহ দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে। দিল্লি সব সময় বলে এসেছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তিতেই মূলত তিস্তা চুক্তি আটকে আছে। এবার নরেন্দ্র মোদী তার প্রথম দফার চেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, এবং পশ্চিমবঙ্গেও তার দল সাফল্যের দেখা পেয়েছে। তাহলে কী তিস্তা নিয়ে এবার আশাবাদী হতে পারে বাংলাদেশ? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এখনি সে আশা করা হলে ভুল হবে। “মনে রাখতে হবে তিস্তা ইস্যু ভারতের জন্য একটা দরকষাকষির বিষয়। ফলে খুব শীঘ্রই এটা সমাধান হয়ে যাবে সে আশা করা ভুল হবে। এই তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আরেকটা রূপ দেখা যাবে কয়েক মাসের মধ্যেই। তখন বোঝা যাবে এজন্য মমতা ব্যানার্জীর আপত্তিই একমাত্র কারণ কিনা।” তবে, অধ্যাপক ইয়াসমিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের সম্পর্কে অগ্রগতির পেছনে সেইটি প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন।
বাণিজ্য ঘাটতি কি পূরণ হবে অচিরেই?
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেশ বড়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরেও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়ে বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে, সম্পর্কে আস্থা ধরে রাখার জন্য যেগুলোতে মনোযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা, বলছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন “ভারত বাংলাদেশকে যে লাইন অব ক্রেডিট দেয়, সেটা ছাড় করায় দীর্ঘসূত্রিতা থাকে, প্রকল্প পর্যন্ত পৌছাতে অনেক সময় লাগে। আবার এর শর্ত থাকে তাদের দেশ থেকে কাঁচামাল কিনতে হবে, সেটা অনেক সময় আমাদের জন্য সুবিধাজনক হয় না।” “এর বাইরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিও অনেক। এসব বিষয় আগের মেয়াদে কোন সমাধান আসেনি, এবার মোদী সরকার সে বিষয়ে নজর দেবে সেটাই হবে বাংলাদেশের প্রত্যাশা।” যদিও ভারতের বাজারে বাংলাদেশের প্রায় ৯৮% পণ্য বিনা শুল্কে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। কিন্তু নানা রকম অশুল্ক বাধার কারণে সে সুবিধা বাংলাদেশ পুরোপুরি নিতে পারছে না। ফলে সামনের দিনে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের দিকে যেতে হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।