ফেসবুকে ভাইরাল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে শরীফুলের খোলা চিঠি
চিঠি পাঠানোর অনেক উপায়ই বাংলাদেশে আছে। সরকারি পোষ্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এই সেবা দিয়ে থাকলেও প্রযুক্তির আবির্ভাবে তা ইমেইলের গিয়ে পৌছে গেছে। কিন্তু প্রযুক্তিকে একটু অন্যভাবেই ব্যবহার করেছেন শরীফুল ইসলাম। জ্বালানী ছাড়া ইঞ্জিন আবিস্কারের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি খোলা চিঠি পোষ্ট করেছেন শরীফুল ইসলাম।
টাংগাইলের মির্জাপুর উপজেলার চান্দুলিয়া গ্রামের ছোরত আলীর ছেলে শরীফুল ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এই খোলা চিঠি পোষ্ট করলেও এতদিন পর হঠাৎ করেই পোস্টটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওই ফেসবুক পোস্টে নিজের ছবি সংবলিত ১০০ টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে লেখা চিঠির স্ক্যান কপিও তিনি সংযুক্ত করেছেন। আর এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষ লাইক করেছেন, ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ মন্তব্য করেছেন এবং প্রায় ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ শেয়ারের মাধ্যমে চিঠিটিকে ভাইরাল করেছেন।
ফেসবুকে নিজের স্ট্যাটাসে শরীফুল লিখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আমার এই চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে তুলে ধরছি এবং আমার নিকটস্থ মূলকপিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানোর জন্য সহযোগিতা কামনা করছিঃ-
এরপর ‘বিসমিল্লাহীর রাহমানির রাহীম’ বলে শুরু করে তিনি আরও লিখেন,
শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী,
পত্রের প্রথমে আমার সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে ও বাংলাদেশের সকল জনগণের দোয়ায় আপনি ভাল আছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে যে গুরুদায়িত্ব আপনি পালন করছেন তা ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আপনার বলিষ্ঠ ও দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সহযোগীতা কারনেই বাংলাদেশ আজ পাটের জ্বীন-নকশা আবিষ্কার করার গৌরব লাভ করেছে। দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য আমি আমার গবেষণার বিষয়বস্তু আপনার কাছে তুলে ধরছি এবং আপনার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করছি।
এরপর তিনি লিখেন-
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
বর্তমান সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের ধারনা যে জ্বালানী ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করা অসম্ভব। অর্থাৎ (তেল, গ্যাস, কয়লা, পানি, বাতাস, সৌরশক্তি) ব্যবহার ছাড়া কোন প্রকার স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। কিন্তু তাদের সে ধারণা ভূল প্রমাণিত করে আমি দীর্ঘ ৮ (আট) বছর যাবৎ গবেষণা করে প্রায় সাড়ে তিনশত বার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে জ্বালানী ছাড়াই স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি। এই ইঞ্জিনে কোন প্রকার জ্বালানী ব্যবহার করতে হবে না। এই ইঞ্জিন দিয়ে জ্বালানী ব্যবহার ছাড়াই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের যত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন তা উৎপাদন করা যাবে এবং সকল প্রকার যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টীমার, জাহাজ, উড়োজাহাজ চালানো যাবে। আমার এই গবেষণা কাজে প্রায় ১৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গবেষণার কাজে এই টাকার যোগান দিয়েছে আমার পরিবার। পাকা ধানক্ষেতসহ সমস্ত জমি বন্ধক রেখে ও আমার বড় ভাই বিদেশ থেকে টাকা দিয়েছে। এই গবেষণা কাজের জন্য আমি দুই বার ইন্ডিয়াতে গিয়েছি। অবশেষে ট্রেড লাইসেন্স, টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স সার্টিফিকেট, ভ্যাট-ট্যাক্স সার্টিফিকেটসহ ইন্টারন্যাশনাল ইমপোর্ট লাইসেন্স করে চীন থেকে যন্ত্রাংশ এলসির এর মাধ্যমে চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে আপনার সরকারকে ১,৭৭,১৪০ (১ লক্ষ সাতাত্তর হাজার একশত চল্লিশ টাকা) ট্যাক্স প্রদান করে আনা হয়। অবশিষ্ট যন্ত্রাংশ দেশেই তৈরী করা হয় । সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জ্বালানীবিহীন ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জ্বালানীবিহীন একটি প্রাইভেটকার গাড়ী প্রদর্শন করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয় এবং এর জন্য গাড়ীও কেনা হয়েছে যার রেজিষ্ট্রেশন নং ঢাকা মেট্রো গ-১১-১৩০৮। ইচ্ছা ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দিয়ে উক্ত আবিষ্কারের প্রকল্পটি দেশবাসীসহ সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরবো। কিন্তু পহেলা আগষ্ট ২০১৬ তারিখে চূড়ান্ত পরীক্ষায় যন্ত্রাংশের কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। এই ত্রুটি সম্পূর্ণ দূর করে স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের একটি মডেল বা নকশা উদ্ভাবন করেছি। উক্ত মডেল বা ড্রয়িং অনুযায়ী বাংলাদেশে যন্ত্রাংশ তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই সহজলভ্য হিসাবে পার্শ্ববর্তী দেশ চীনে গিয়ে আমার উদ্ভাবিত ড্রয়িং অনুযায়ী যন্ত্রাংশ তৈরী করে স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিনের বাস্তবে রুপ দিয়ে উক্ত প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে দিয়ে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীদের প্রতি আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বলছি এটা অবাস্তব নয়, এটা সত্য, এবং বাস্তব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি আপনাকে ভালবাসি, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি এবং আমি প্রতিজ্ঞা করেছি একমাত্র আপনার উপস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাবিদগণের সামনে আমি আমার গবেষণার ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ তুলে ধরব। কোনো প্রকার জ্বালানী ব্যবহার ছাড়াই আমার উদ্ভাবিত ইঞ্জিন কেন চলবে? কিভাবে চলবে? কেন সম্ভব? কিভাবে সম্ভব? তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ছাড়া আমি আমার গবেষণার ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ অন্যথায় প্রকাশ করবো না। একমাত্র আপনার কাছেই করব।
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীগণ বা বিশেষজ্ঞগণ যদি আমার উদ্ভাবিত স্বয়ংক্রিয় ইঞ্জিন বা ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’র ভুল ধরতে পারবে না। উক্ত ইঞ্জিন আবিষ্কারটি অসম্ভব মনে করে সম্মানিত সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাকে সহযোগীতা করেছে না। কারণ সাংবাদিক ভাইয়েরা বলেন, ইহা কিভাবে সম্ভব তাহা সম্পূর্ণ বিস্তারিতভাবে ফর্মূলা তাদের বলতে হবে এবং তাদের বিস্তারিত যন্ত্রাংশগুলো দেখাতে হবে। কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য আবিষ্কারের গোপনীয়তা রক্ষা করা ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি/পেটেন্ট গ্রহণের লক্ষ্যে সম্মানিত সাংবাদিক ভাইদের যৌক্তিক দাবীগুলো এখনই পূরণকরা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অপরদিকে সম্মানিত সাংবাদিক ভাইদের অসহযোগীতার কারণে আপনার কাছে এবং জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে অবহিত করার জন্য নানা ভাবে চেষ্টা করছি এবং বিভিন্নভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছি। অনেকে টাকার বিনিময়ে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে কিন্তু সে টাকার পরিমাণও কম নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন যে সারা বিশ্ব আজ জ্বালানী ব্যবহার করে জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং উক্ত বিষয়ের উপর আপনিও জাতিসংঘে ভাষণ প্রদান করেছেন। আমি আপনাকে বলতে চাই আমার উক্ত ইঞ্জিনে যেহেতু কোন প্রকার জ্বালানী ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই তাই জলবায়ুর পরিবর্তনের কবল থেকেও এই পৃথিবীকে রক্ষা করবে- ইনশাল্লাহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য আপনার সহযোগীতা আমার একান্ত প্রয়োজন। আপনার সহযোগীতা পেলে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব- ইনশাল্লাহ। তিন পাতার এই চিঠি শরিফুল স্থানীয় নোটারি পাবলিক থেকে সত্যায়িতও করিয়েছেন।