ফেসবুক পোস্ট থেকে বিয়ে!
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে আসে হরেক রকমের পোস্ট। কোনোটায় থাকে বন্ধুত্বের আহ্বান, আবার কোনো পোস্টে থাকে নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপে যোগ দেওয়ার অনুরোধ। কিন্তু বিয়ে করার জন্য পাত্রী চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট কি কখনো দেখেছেন? এমনটাই ঘটেছে নাইজেরিয়ায়। চিদিম্মা আমেদু নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে আনুষ্ঠানিক পোস্ট দিয়ে কনে খুঁজে নিয়েছেন। এরই মধ্যে বিয়েও হয়ে গেছে। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, গত ৩০ ডিসেম্বর পাত্রী চেয়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপনমূলক একটি পোস্ট লেখেন চিদিম্মা আমেদু। পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার বিয়ের বয়স হয়েছে এবং এ নিয়ে আর সময় নষ্ট করতে চাই না। আপনাদের আবেদন পাঠিয়ে দিন। সবচেয়ে যোগ্য হবেন যিনি, তাঁকে আগামী ৬ জানুয়ারি বিয়ে করব। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ সময় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭, রাত ১২টা।’ ফেসবুকে এমন পোস্ট দেওয়ার পর থেকে আসতে থাকে নানা উত্তর। অনেকে চিদিম্মাকে ব্যঙ্গও করছিলেন। একজন নারী যেমন উত্তরে লেখেন, ‘আমি এ ব্যাপারে আগ্রহী এবং এ কথা বলতে চাই না যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাত্রী পাবেন না।’ এমন কিছু উত্তরের ভিড়ে একটি মন্তব্যে চোখ আটকে যায় চিদিম্মার। সোফি ইজেওমা নামের ওই তরুণী লেখেন, ‘আমি আগ্রহী, শুধু ইনবক্সে বার্তা পাঠান।’ বার্তার শেষে ছিল হাসির ইমো। সোফি ইজেওমা স্রেফ মজা করেই এ উত্তর দিয়েছিলেন। কল্পনাও করতে পারেননি—এই একটি উত্তরই তাঁর জীবনের গল্প পাল্টে দেবে। তাঁকে ফেসবুকে সরাসরি বার্তা পাঠান চিদিম্মা। এরপর মেসেঞ্জারে ফোনও করেন। কথা হয় টুকটাক।
প্রথম কথা হওয়ার দুদিন পর ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আবুজা শহরের পূর্বাঞ্চলে সোফির সঙ্গে দেখা করতে আসেন চিদিম্মা। স্থানীয় একটি দোকানের বাইরে তাঁদের চার চোখ এক হয়। সোফির ভাষায়, রূপকথার মতোই প্রথম দর্শনেই চিদিম্মার প্রেমে পড়েন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ সে। দেখা হওয়ার পরই তাঁকে পছন্দ করে ফেলি।’ ওই দিন দুই ঘণ্টার আলাপের পর সোফিকে নিজের চাচার বাড়িতে নিয়ে যান চিদিম্মা। চাচার সামনে গিয়ে চিদিম্মা জানান, সোফিকে বিয়ে করতে চান তিনি। এতে চট করে রাজি হয়ে যান চাচা। এরপরই শুরু হয় বিয়ের তোড়জোড়। সোফি বলেন, ‘যখন আমি প্রথমবার তাকে দেখি, তখনই আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের বিষয়টি নিয়ে সে কতটুকু আন্তরিক, সেটি জানতাম না। যখন সে আমাকে তার চাচা-চাচির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল, তখন বুঝতে পারলাম সত্যিই বিয়ে হচ্ছে। আর আমিও এটি চাইছিলাম।’চিদিম্মা ও তাঁর পরিবার বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেও সোফির জন্য বিষয়টি ছিল একটু কঠিন। কারণ, স্রেফ মজা ও কৌতূহল থেকেই ফেসবুক পোস্টে উত্তর দেওয়া ও চিদিম্মার সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। কিন্তু এখন? কীভাবে পরিবারের সদস্যদের বলা যায় যে ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে রাতারাতি বিয়ের পাত্র পেয়ে গেছেন সোফি!
এই সমস্যার সমাধান করতে ওই একই দিন সোফির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান চিদিম্মা। সোফির বাবা মারা গেছেন অনেক দিন আগে। সোফির অভিভাবক বলতে ছিলেন তাঁর বড় ভাই ও মা। স্বাভাবিকভাবেই বড় ভাইয়ের প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয় চিদিম্মাকে। তবে কিছুক্ষণ কথা বলার পরই বিয়ের অনুমতি দিয়ে দেন তাঁরা। হয়ে যায় চিদিম্মা ও সোফির বাগদান। ৬ জানুয়ারি বিয়ে হয়েছে এই যুগলের। ফেসবুক পোস্টে উত্তর দেওয়ার ছয় দিনের মধ্যেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সোফি। নিজেদের বিয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্টও করেছেন তাঁরা। বিয়ের পর চিদিম্মা আরেকটি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘মানুষ হয়তো ভেবেছিল আমি মজা করছি। আসলে বিষয়টি শুধু মজা ছিল না, আমি বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু কোনো কনে ছিল না। আমি তাই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। প্রথমে মজা হিসেবে বিজ্ঞাপন দিলেও প্রস্তাব এলে তা গ্রহণ করার মতো মানসিক প্রস্তুতিও আমার ছিল।’