ফেসবুক হ্যাক হলে যা করবেন
বর্তমান সময়ের একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ফেসবুক ব্যবহারে রীতিমতো আসক্ত হয়ে পড়ছে এর ব্যবহারকারীরা। তবে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ম কানুন ভালভাবে না জানার ফলে ফেসবুক হ্যাক হয় বিধায় অনেককেই নানা হয়রানী ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়া এক ব্যবহারকারী নোমান(ছদ্ম নাম)। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। একদিন রাত সাড়ে ১০টায় অজ্ঞাত এক নম্বর থেকে ফোন আসে তার সেল ফোনে। ভরাট গলায় বলা হয়, “আপনার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক করা হয়েছে। এমন কথা শুনে কিংকর্তব্যমিূঢ় অবস্থায় দ্রুত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সাইন করতে গিয়ে দেখেন পেজ খুলছে না। তার নিজের পাসওয়ার্ডটিকে ভুল বলা হচ্ছে। তার মানে অ্যাকাউন্টটি এখন অন্যের কবজায়। বিশ মিনিট পর হ্যাকাররা পুনরায় ফোন করে জানায় নতুন পাসওয়ার্ড পেতে হলে তাদের বিকাশ নম্বরে ৫ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। হ্যাকাররা আরো বলে যদি আপনি আমাদের দেয়া নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে দাবিকৃত টাকা না পাঠান, সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে আজে-বাজে স্ট্যাটাস দেয়া হবে। নোমান সাহেব হ্যাকারদের টাকা দাবীর বিষয়ে কোন কর্ণপাত করেননি। নোমান সাহেবের ভাষ্যমতে হ্যাকাররা বেশ শিক্ষিত এবং প্রযুক্তিমনা। তাদের কথায় আঞ্চলিকতা নেই। উচ্চারণও বেশ শুদ্ধ।
কিছুদিন পর করিম সাহেব থানায় অভিযোগ করেন নোমান নামের ফেসবুক আইডি হতে তার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবী করা হয়। দাবীকৃত টাকা পঠানোর জন্য একটি বিকাশ নাম্বারও দেয়া হয়। করিম সাহেবের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ উক্ত আইডির তথ্য ব্যবহার করে নোমান সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। নোমান সাহেব পুরো ঘটনা পুলিশকে বলে। পাশাপাশি পুলিশ বিকাশ নাম্বার ব্যবহারকারীকেও গ্রেফতার করে।পাঠক আপনিও যে কোন সময় হতে পারেন নোমান অথবা করিম সাহেবের মতো এমন বিড়ম্বনার শিকার। তাই ফেসবুক ব্যবহারে সচেতনতা জরুরী। নিরাপদ ফেসবুক ব্যবহারে আপনার করণীয় সম্পর্কে জানাচ্ছে ডিএমপি নিউজ-
১। পাসওয়ার্ড রক্ষা করতে হবে-
কখনও আপনার পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করা যাবেনা।
এমন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন যা অনুমান করা কঠিন। কখনই নিজের নাম বা সাধারণ শব্দ পাসওয়ার্ড এ ব্যবহার করা উচিত না।
ফেসবুক পাসওয়ার্ডটি শুধু মাত্র ফেসবুকের জন্য ব্যবহার করা উচিত। অন্য কোন সিকিউরিটির ক্ষেত্রে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে তা প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২। অন্য কেউ যেন আপনার ফেসবুক একাউন্টে লগ ইন করতে না পারে তাই অতিরিক্ত নিরাপত্তা (Login Approvals) ব্যবহার করতে পারেন।
এই জন্য ফেসবুকের Two step verification পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
৩। ই-মেইল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে হবে।
৪। ব্যবহার শেষে ফেসবুক একাউন্ট থেকে অবশ্যই লগ আউট করতে হবে।
৫। নিউজ ফিডে অথবা মেসেঞ্জারে সন্দেহজনক কোন লিঙ্ক দেখলে সাথে সাথে রিমুভ করে দিতে হবে। নিশ্চিত না হয়ে যেকোন গেম, অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যদের পাঠানো কোনো লিঙ্কে ক্লিক করা উচিত না।
৬। ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বিকল্প ই-মেইল আইডি যুক্ত করুন। যদি আপনার প্রোফাইল কোন কারনে হ্যাকও হয়ে যায় সেক্ষেত্রে ফেসবুক আপনার দ্বিতীয় ইমেইলে আপনার অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারের জন্য তথ্য পাঠাবে।
৭। অপরিচিত কারোর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করার আগে তার প্রোফাইল চেক করে নিতে হবে।
৮। একেবারে ব্যক্তিগত কোন ছবি, তথ্য(ফোন নাম্বার, ঠিকানা, ই-মেইল এড্রেস ইত্যাদি) ফেসবুকে শেয়ার করা উচিত না।
৯। আপনার পোস্ট কারা দেখতে পারবে তা সতর্ক ভাবে নির্বাচন করতে হবে।
১০। পাবলিক কম্পিউটারে (সাইবার ক্যাফে, ল্যাব ইত্যাদি) ফেসবুক ব্যবহার না করাই ভাল। তবে ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারের পর লগ ইন হিস্টোরি মুছে দিতে হবে।
ভূক্তভোগীর করণীয় :
১। ফেসবুক হ্যাকের মাধ্যমে হয়রানি কিংবা বিড়ম্বনার শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করুন এবং জিডি অথবা মামলা করুন।
২। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ করুন।
৩। `HELLO CT’ এ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে অভিযোগ করুন।