অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় দু’টি হচ্ছে, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া এবং সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার সর্তক করা হলেও কোনো সাড়া না পেয়ে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী পরিচালিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় দু’টিকে সংশোধন হওয়ার জন্য কারণ দর্শানো হয়। তারপরও কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

‘জানিয়ে দেয়া হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘাটতি পূরণ না হলে তাদের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে।’ বিশ্ববিদ্যালগুলোর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে তিন মাসের মধ্যে ঘাটতি পূরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়। অন্যথায় আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার ১৫টি ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, নিবন্ধন দলিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা উল্লেখ না করা, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো, সিন্ডিকেটের সভা না হওয়া, একাডেমিক কাউন্সিল গঠন না করা, নীতিমালা অনুযায়ী বিভাগভিত্তিক পূর্ণকালীন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক না থাকা, কর্মকর্তা নিয়োগ না দেয়া ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি এইচএসসি পাস একজনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। গবেষণার জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। নেই কোনো ল্যাবরেটরিও। আর বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সেমিস্টারের ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে একত্রে করে একজন শিক্ষক পাঠদান করান, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এর লঙ্ঘন।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিরুদ্ধে। আইন অনুযায়ী অবকাঠামো না থাকা, চ্যান্সেলর কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ না থাকাসহ বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে ইউজিসির পরিদর্শক দল।

কর্মকর্তারা জানান, ইউজিসির টিম সিসিএন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পরিদর্শনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিরাপত্তা প্রহরী কিংবা সিসি ক্যামেরা দেখতে পায়নি। নেই কোনো সীমানা প্রাচীরও, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ এর ৯ (৫) ধারার শর্ত লঙ্ঘন।

এমনকি আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষিত তহবিলে তিন কোটি টাকা ব্যাংকে এফডিআর রাখার কথা থাকলেও তা নেই। বিভিন্ন সময় তা তুলে নেয়া হয়েছে। ইউজিসির উপ-পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জেসমিন পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা অনিয়ম পেয়েছি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn