বন্যার শঙ্কায় ফসল তোলার তোড়জোড়, শ্রমিক সংকটে চাষীরা
সুনামগঞ্জে্র বিল ও হাওরগুলোতে পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছে কৃষকরা। বন্যার শঙ্কায় দ্রুত ফসল কাটার ধুম পড়েছে। তবে শ্রমিক সঙ্কটের কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , এ মাসে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন খবর পেয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। গত বছরও বোরো মৌসুমে আকস্মিক বন্যায় উপজেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় এবারও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না কৃষকরা। এপরিস্থিতিতে কৃষকরা তোড়জোড় করে পাকা বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে সবাই তড়িঘড়ি করায় শ্রমিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ধান কাটা ও ফসল মাড়াই পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারী ভাবে পাকা বোরো ধান প্রায় অর্ধেক ফসল কাটা হয়ে গেছে দাবি করলেও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত উৎপাদনের প্রায় ২৫ ভাগ ফসল ঘরে তোলা হয়েছে। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওরের মাঠে মাঠে এখন সোনালি ধান কাটার উৎসব। গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আশায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হাওরে। তবে কৃষকের ব্যস্ততা ও দুশ্চিন্তা দুটোই বাড়ছে। হন্যে হয়ে খুঁজছেন শ্রমিক। ধান কাটার জন্য শ্রমিকের জন্য খবর পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। মেরামত করা হচ্ছে ধানের গোলা। এ মুহূর্তে শ্রমিক সংকটই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকনার হাওরের জনৈক কৃষক বলেন, ধান পাকলেও শ্রমিক না পাওয়ায় কাটা যাচ্ছে না। অন্যান্য বছর অন্যান্য জেলা থেকে শ্রমিকরা ধান কাটতে আসতো। এবার তারাও আসেনি। আর স্থানীয় শ্রমিকরা নিজেদের উৎপাদিত ধান কাটতে ব্যস্ত। অন্য আরেক কৃষক জানান, প্রায় পাঁচ বিঘা জমির ধান পেকে গেছে। শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক বেশি টাকা মজুরিতে শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। তিনি আরো বলেন, শুধু আমি নই, সকল কৃষকের একই অবস্থা। শ্রমিক সংকটে সবাই রয়েছে। শ্রমিকদের সংকট ও বন্যার আশঙ্কায় কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তারপরও ফসল তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। সকল বোরো ধান এক সাথে পাকার কারণে বেপাকে রয়েছেন অনেকে। বন্যার শঙ্কার কথা শুনে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের খুঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য ফসল ঠিকমত ঘরে তুলতে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। আরেকজন জানান, এবার আমি ১০/১২ কিয়ার জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ধান ভাল হলেও বন্যার খবর শুনে কিছুটা শঙ্কায় রয়েছি। তড়িঘড়ি করে রাত দিন ফসল তুলতে আমাকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বোরো আবাদ। ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে ধান উৎপাদনে কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও কৃষি অফিস ও কৃষকদের সচেতনতায় এই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার কৃষকেরা পাকা বোরো ধান আবাদের প্রায় অর্ধেক ফসল ঘরে তুলেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন হাওরের কৃষকরা। আবহাওয়া অফিসের দেওয়া চলতি মাসে বন্যা আশঙ্কার খবর শুনেকৃষকদের দ্রুত ফসল তুলতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি অফিস এ ব্যাপারে নজর রাখছে।