বন্যা ব্যবস্থাপনার ইতিবৃত্ত
হাসান হামিদ-
ছোটবেলায় আমরা সবাই বন্যা শিরোনামে বাংলা রচনা পড়েছি। সেই লেখাগুলোতে বন্যার কারণ, প্রতিকার ও মোকাবিলা এসব বিষয় যুগ যুগ ধরে মুখস্থ করলেও সেসবের ধার আমরা ধারি না। এ লেখাটির শুরুতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি বলেছেন, ঘন ঘন বন্যার কবলে পড়লেও এ বছর ঘাটতি মোকাবিলা করতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় বর্তমান সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেনে আমরা সাধারণেরা স্বস্তি পাই। আরও একটি ব্যাপার প্রশংসনীয় যে, সতর্কতামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যায় মানুষ যদি অন্তত খাদ্যের অভাবে না পড়ে তবে অন্য দিকগুলো সামাল দিয়ে সময় সুযোগ পাবে। সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে জেনেছি, দেশে একটি বড় বন্যা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এবার উজানের ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা অববাহিকায় পানির উচ্চতা ৭৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা পরিস্থিতিবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১০ আগস্ট সংস্থাটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভুটান ও নেপালের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে গত শুক্রবার থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে পারে। ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে। এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে চীন ও ভারতে ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়ে গেছে। ওই দুই দেশের ভেতর দিয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পানি স্মরণাতীত কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের চেয়ে বড় ও ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।
খবরের কাগজে দেখলাম, ইতিমধ্যে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাংলাদেশ অংশে গড়ে ৫০ সেন্টিমিটার ও গঙ্গা-পদ্মায় ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। টানা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো। বন্যা এখন দেশের পূর্বাঞ্চলের দিকে এগোচ্ছে। ঢাকাকেও ঝুঁকির তালিকায় রাখা হয়েছে। ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৭ জন। ভেঙে গেছে বেশ কয়েকটি বাঁধ। পানির স্রোতের তীব্রতায় হুমকির মুখে পড়েছে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা। সংশিল্গষ্ট এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে রেললাইন ও মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় জেলা দুটির সঙ্গে দেশের রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মহাসড়কের কয়েক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রাখা হয়েছে।
আমরা সবাই জানি, পানি বেড়ে গিয়ে আশপাশের সমভূমি প্লাবিত করলে সাধারণত জনগণের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্লাবনভূমি যেহেতু মানুষের কাঙ্খিত ও কৃষিকাজের সহায়ক, তাই বন্যাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা ও এর ক্ষয়ক্ষতি যাতে সীমা ছাড়িয়ে না যায় তা লক্ষ করা জরুরী। প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চল অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখন্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতিবছর গড়ে বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮৪৪,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। বাৎসরিক মোট প্রবাহের এটি ৯৫ শতাংশ। তুলনায় একই সময় দেশের অভ্যন্তরে ১৮৭,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার নদী প্রবাহ সৃষ্টি হয় বৃষ্টিজনিত কারণে।
বাংলাদেশে বন্যার ইতিহাস দেশটির ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি শতাব্দীতে বঙ্গীয় বদ্বীপ প্রায় অর্ধডজন বন্যার মুখে পড়েছে, ব্যাপকতায় যা ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার প্রায় সমান। বাংলাদেশের এই মৌসুমি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মহাভারত, রামায়ণ ও অন্যান্য গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের (৩২১-২৯৬ খ্রি পূ) শাসনামলে তাঁর অর্থমন্ত্রী কৌটিল্য রচিত অর্থশাস্ত্রে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান উল্লেখ রয়েছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, বৃষ্টিপাতের হিসাব সম্পর্কে তাঁদের ধারণা ছিল। জ্যোতির্বিদ বরাহমিহির (৫০৭-৫৮৭ খ্রি পূ) বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারতেন। জ্যোতির্বিদ আর্যভট্ট ও ব্রহ্মগুপ্তও বর্ষা মৌসুম নিয়ে গবেষণা করেছেন। বিখ্যাত সংস্কৃতকবি কালিদাস বিরচিত বর্ষার বিরহাভিসার মেঘদূত ও ঋতুসংহার কাব্য বিশ্ববিশ্রুত ধ্রপদী-মহাকাব্য। তবে প্রাচীনকালে খনা নাম্নী এক বিদুষী মহিলা আবহাওয়া ও কৃষিবার্তা সম্পর্কে অধিকাংশ পূর্বাভাস করে গেছেন। আজও বাংলাদেশের কৃষককুল তাঁর রচনাসমূহ স্মরণ করে। আরবরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে গিয়ে ঋতুর সঙ্গে মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন জ্ঞানকে লাভজনকভাবে কাজে লাগিয়েছে। মৌসুম শব্দটি আরবী শব্দ মৌসিম থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ঋতু। বাংলায় ১৮৭০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত সংঘটিত বন্যার ওপর অধ্যাপক পিসি মহলানবীশ প্রণীত সর্বপ্রথম বিস্তারিত রিপোর্টটিতে দেখানো হয়েছে যে, মাঝারি আকারের বন্যা গড়ে প্রতি দুই বছরে একবার এবং ভয়াবহ বন্যা গড়ে ৬/৭ বছরে একবার সংঘটিত হয়েছে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নির্গমন প্রকল্পগুলি বাঁধ, পোল্ডার ও অভিকর্ষিক পরিবাহীর ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। বন্যা ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পদ্ধতির ওপর অতি নির্ভরশীলতা এবং একই সঙ্গে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথের মতো অন্যান্য স্থাপনা সমূহ যা পানির প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে, এদের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে দেশে বন্যা পরিস্থিতিকে আরও সঙ্গিন করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নির্গমন প্রকল্পসমূহে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ সত্ত্বেও এক্ষেত্রে ফলাফল সন্তোষজনক নয়। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যা ব্যাপক ধ্বংসের দুর্ভোগ ও প্রাণহানির কারণ হয়। পর পর দুই বছর এই বন্যার ফলে সরকার পুনঃপুনঃ বন্যা সমস্যার একটি দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাপক ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্রতী হয়। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জরিপ চালানো হয়, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৮৯ সালে বন্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনা (FAP) প্রণীত হয়।
বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা বন্যার ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার ব্যাপারে কয়েকটি প্রস্তাব করা হয়। অবশ্য এইসব প্রস্তাবের অধিকাংশই গঙ্গানদী কেন্দ্রিক, যদিও বন্যা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের নির্গমনের মাত্রা গঙ্গা নদীর চেয়ে বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশ বন্যার হাত থেকে জনবসতি ও ফসলি জমি রক্ষার জন্য প্রতিবছর ১,৩০,০০০ হেক্টর হারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (অধিকাংশই পোল্ডার) নির্মাণের কৌশল অনুসরণ করছে। মুনাফা ও নিরাপত্তার দিক থেকে এর উপকারিতা ভালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যদিও দীর্ঘমেয়াদে এর পরিবেশগত প্রভাব যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।
বন্যার ক্ষতি ও প্রতিকূল প্রভাব হ্রাস করতে ও অতিরিক্ত পানি সেচকার্যের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন র্বোড কিছু সংখ্যক বাঁধ তৈরি করেছে ও খাল খনন করেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: জি-কে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) প্রজেক্ট, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্ট, কর্ণফুলী বহুমুখী প্রকল্প, উপকূলীয় বাঁধ প্রকল্প, উত্তরবঙ্গের নলকূপ প্রকল্প, ব্রহ্মপুত্র বাঁধ, চাঁদপুর সেচ-প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা প্রকল্প, মনু নদী প্রকল্প, খোয়াই নদী প্রকল্প, পাবনা সেচ প্রকল্প, গোমতী প্রকল্প, মহুরী বাঁধ প্রকল্প, তিস্তা বাঁধ প্রকল্প (পর্যায়-১), ঢাকা সমন্বিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, প্রণালী পূনর্বাসন প্রকল্প, জরুরী বাস্তবায়ন প্রকল্প। এসব কাঠামোগত পদক্ষেপসমূহ ছাড়াও বন্যা প্রশমন প্রক্রিয়া ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের একটি বিকল্প কৌশল হিসেবে অ-কাঠামোগত পদক্ষেপের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
অ-কাঠামোগত পদক্ষেপ বলতে বন্যা মোকাবিলায় সামাজিক অভিযোজনকে বোঝানো হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে: (১) জনগণ যাতে দ্রুত নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে বন্যার পানির উচ্চতা বৃদ্ধির যথেষ্ট সময় পূর্বে জনগণের কাছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে জোরদার করা; (২) নদনদীর উপচে পড়া পানি হ্রাসের লক্ষ্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা সাধন। এ উদ্দেশ্যে বনায়ন এবং পুনর্বনায়নের সমন্বিত কর্মসূচী গ্রহণ ও তার যথাযথ সংরক্ষণ যাতে পরিশোষণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যার পানির উচ্চতা হ্রাস ঘটতে পারে; (৩) ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন এবং বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগ, শস্য উৎপাদন বহুমুখীকরণ তথা, বন্যা প্রতিরোধী বা বন্যা সহনক্ষম শস্য চিহ্নিতকরণ ও রোপণ করা এবং শস্য রোপণ মৌসুমের অভিযোজন; (৪) প্লাবনভূমিসমূহকে বিভিন্ন জোনে বিভক্ত করা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভূমি ব্যবহার জোন তৈরি করা। অ-কাঠামোগত পদক্ষেপসমূহ স্বল্প ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। যেহেতু বন্যা ব্যবস্থাপনা সার্বিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেহেতু আঞ্চলিক সহযোগিতা পানি প্রতিবেশ ব্যবস্থার স্থায়ী সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অতি প্রয়োজনীয় যৌথ কলাকৌশলের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে।
দুঃখের কথা হলো, আমরা কতগুলো ভুল ধারণা নিয়ে বন্যা মোকাবেলা করতে চাই। আমরা বন্যা থামিয়ে দিতে পরিকল্পনা করি। অবস্থানগত কারণে আমাদের এখানে বৃষ্টি হবে, কম বৃষ্টি হলে কম পানি আসবে, বৃষ্টি বেশি হলে নদ-নদীতে পানির চাপ বাড়বে। এটা মনে রাখতে আমরা ভুলে যাই। মনেই থাকে না যে, বন্যা প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। আমরা সবসময় ঘটনার পরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। ঘটনা ঘটার আগে আমরা জাগি না। যে বন্যা শুরু হয়েছে তার ক্ষতির দিক কীভাবে সহনীয় রাখা যায়, সেদিকে আমাদের নজর দেওয়া দরকার। সরকার কয়েকটা শহর রক্ষায় সেনাবাহিনী নিয়োগ করেছে। এটা বেসামরিক প্রশাসনের সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেও এই মুহূর্তে সেটা ভাবনায় আনার প্রয়োজন নেই। কারণ এখন মানুষ ও সম্পদ বাঁচানোর চেষ্টা করা দরকার, যেটা সেনাবাহিনী দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবে। তবে কতগুলো প্রশ্ন আমাদের বিবেচনায় থাকুক, সময়-সুযোগ পেলে আমরা সেগুলো আলোচনায় আনব। যেমন শুনছি, পানির উচ্চতা বেড়েছে, সেটা হতেই পারে আবার কোথাও কোথাও বাঁধ নাকি ইঁদুরে গর্ত করে ফেলেছিল, সেখান থেকে পানি ঢুকে বাঁধ দুর্বল করে ফেলেছে। যে এলাকায় এটা হয়েছে, সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস আছে_ দায়িত্বশীল কেউ না কেউ আছেন। তারা অফিস করেন, বেতন নেন। আবার এটাও ঠিক যে, এদের সারা বছর কাজ থাকে না। তাহলে তাদের যে আসল কাজটি তারা করতে পারছেন না বা করছেন না।
সবকিছু বাল দিয়ে আমরা এই মুহূর্তে নজর দেব আমাদের প্রস্তুতির দিকে। যে প্রস্তুতি নিলে মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমাতে পারব। ব্যক্তি উদ্যোগে যে যা করছেন, তা প্রশংসনীয় হলেও তা কিছু মানুষের দুর্ভোগ সাময়িক লাঘব করবে; সবার না। তাই বলে ব্যক্তিগত উদ্যোগ আমরা থামিয়ে দেব না। স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে। আর সংসদ সদস্যদের যেতে হবে দুর্গত মানুষের কাছে। আমাদের নজর দেওয়া উচিত সরকারি প্রস্তুতি কেমন তার দিকে। যে জেলাগুলো আক্রান্ত হয়েছে, সেখানে তাদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে প্রস্তুতির কী কী ঘাটতি আছে সেটা এখনই তালিকা করে রাখা। সরকার চাল সংগ্রহের জন্য কিছু উদ্যোগ নিচ্ছে বলে খবর বেরিয়েছে। ভালো উদ্যোগ। তবে এটা আগে হলে আরও ভালো হতো। আশ্রয়কেন্দ্রে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অবস্থা কেমন বা বন্যা এলে যেখানে আশ্রয় দেওয়া হবে সেখানের পরিস্থিতি দেখা দরকার। আর চারদিকে কেবল চিড়া-গুড় বিতরণ করার খবর শুনি। ত্রাণকাজ মানেই চিড়া-গুড় এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আমাদের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের এই কাজে মনোযোগী হতে হবে। আমরা বলি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের দেশ নাকি রোল মডেল। কিন্তু দুই-এক বছর বিরতি দিয়ে এখানে কোথাও না কোথাও বন্যা হচ্ছে; আমরা এই বিপর্যয় ঠেকাতে পারছি না।