বরিশালে বিশাল জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হয়
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আমরা উন্নয়ন করেছি। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করুন। আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করুন নৌকায় ভোট দিবেন। এ সময় উপস্থিত লাখো জনতা হাত তুলে ও শ্লোগান দিয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপেনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ইনশাল্লাহ আবার দেখা হবে। আবার আসিব ফিরে, ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বরিশালে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশাল বিভাগ দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। আমরা পায়রা বন্দর, স্কুুল, কলেজ, কালভার্ট, সেতুসহ অনেক উন্নয়ন করেছি। এমন কোনো নদী নেই যার ওপর আমরা ব্রিজ করিনি। ভোলায় গ্যাস পাওয়া গেছে। সেই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে আনা হবে। যাতে শিল্প কলকারখানা গড়ে ওঠে। ভোলায় পাওয়ার প্লান্ট করে দেবো, সেই বিদ্যুত্ বরিশাল পর্যন্ত আসবে। আর বরিশাল থেকে ভোলায় যাতে যাওয়া যায় সেজন্য সেতুও নির্মাণ করে দেবো। বরিশালে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০০১ সালে পদ্মা সেতু বানাতে গিয়েছিলাম। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আবার সেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি। সেই সময় বিশ্বব্যাংক আমার ওপর, আমার বোনের ওপর, আমার সরকারের ওপর অভিযোগ এনেছিল যে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলাম, দুর্নীতি করিনি, পারলে প্রমাণ করুক। আল্লাহ রহমতে প্রমাণ করতে পারেনি। আমি কথা দিয়েছিলাম নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করবো, সেই ওয়াদা রেখেছি। আজ যদি উন্নয়ন না করে লুটপাট করতাম তাহলে বরিশালের জন্য ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন আমরা কোনোদিন করতে পারতাম না।
দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রধানমন্ত্রী বরিশালে আসেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে বেলা সোয়া ১১টায় পটুয়াখালীর লেবুখালীতে যান। সেখানে শেখ হাসিনা সেনানিবাস উদ্বোধন করেন তিনি। পরে ৭ পদাতিক ডিভিশনসহ ১১টি ইউনিটেরর পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা ও মহানগর আয়োজিত জনসভাস্থলে পৌঁছান দুপুর সাড়ে ৩টায়। এ সময় লাখো মানুষ তুমুল করতালি ও স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীও মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে অভিবাদনের জবাব দেন। জনসভা থেকে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ৩৯টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩৩টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। দুপুর ১২টার মধ্যে পুরো জনসভাস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে জনসমুদ্রে রূপ নেয়। জনসভাস্থলে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাইরের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে উত্সুক অসংখ্য জনতার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদাশীল ব্যক্তিত্ব ও মানবতার মা হিসেবে আখ্যায়িত করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেলে পরিণত করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। একজন নেত্রী দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান। আর আরেক নেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রথম সারির ১০ জনের মধ্যে একজন। এটা আমাদের গর্ব ও অহঙ্কার। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, শ.ম. রেজাউল করিম, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, শাম্মী আহমেদ, তালুকদার মো. ইউনূস, জেবুন্নেসা আফরোজ, একেএমএ আউয়াল, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ফজলুল কাদের মজনু প্রমুখ। পরিচালনা করেন গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল ও একেএম জাহাঙ্গীর। জনসভা উপলক্ষে বরিশাল নগর ও সংলগ্ন এলাকাগুলোকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। জনসভাস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মঞ্চের পশ্চিম পার্শ্বে নির্মাণ করা হয় প্রতিকী পদ্মা সেতু। মঞ্চের পাশেই ছিল সরকারের উন্নয়নচিত্র প্রদর্শনীর ডিজিটাল বিলবোর্ড। এছাড়া প্রধান সড়কের দুইপাশে শোভা পেয়েছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের তথ্যচিত্র সম্বলিত বিভিন্ন আকারের বিলবোর্ড, ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড।
৩৯ প্রকল্প উদ্বোধন
জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী যে ৩৯ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একাডেমিক ভবন, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল একাডেমিক ভবন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, শেরে বাংলা হল, সরকারি শিশু পরিবার বালিকা (দক্ষিণ), বরিশালের নিবাসীদের নবনির্মিত ডরমেটরী ভবন, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ভবন, বরিশাল বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন (বি-টাইপ), মেহেন্দিগঞ্জ থানা কমপ্লেক্স, আগৈলঝাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভবন, উজিরপুর উপজেলার হারত-বানারীপাড়া গার্ডার ব্রিজ, বাকেরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, হিজলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মুলাদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, বানারীপাড়ার চৌমোহনা জিসি-বানারীপাড়া হেড কোয়ার্টার ভায়া বিশারকান্দি, ওমারের পাড় রাস্তায় নান্দুহার নদীর উপর ২০৯ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উলানীয়া-কালীগঞ্জ ব্রিজ, দেশরত্ন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, ৩০০০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণাগার, ২০০০ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আলু বীজ হিমাগার, ১৬ এমএলভি শোধন ক্ষমতা সম্পন্ন সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, শহীদ আরজু মনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম তলা একাডেমিক ভবন, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম তলা একাডেমিক ভবন, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, হিজলা ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন, সংহতি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উলানিয়া মোজাফফর খান ডিগ্রি কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন, বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়াম ভবন, কড়াপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, মুলাদী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স।
৩৩ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
প্রধানমন্ত্রী যে ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলো— বরিশাল পুলিশ সুপার অফিস, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স, মহিলা কারারক্ষীদের বাসভবন, বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর ভবন, শহীদ আবদুর রব সিরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মুলাদী থানা ভবন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন নার্সিং হোস্টেল, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত অডিটোরিয়াম ভবন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, উজিরপুর উপজেলার সাতলা চৌমোহনী রাস্তায় কঁচা নদীর উপর গার্ডার ব্রিজ, বরিশাল সদর উপজেলাধীন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন সায়েস্তাবাদ জিসি হিজলা উপজেলা হেডকোয়ার্টার ভায়া গাজীর হাট, কাজীর হাট জিসি, মিয়ারহাট এবং একতার হাট সড়কে ৪৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ, হিজলা উপজেলাধীন কাউরিয়া বাজার হতে মেমানিয়া টেকেরহাট ভায়া মৌলভীরহাট রাস্তার উন্নয়নসহ গার্ডার ব্রিজ, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, বরিশাল (দিনারেরপুল)-লক্ষ্মীপাশা-দুমকী জেলা মহাসড়কের রাঙ্গামাটি নদীর উপর গোমা সেতু নির্মাণ, জেলা সমাজ সেবা কমপ্লেক্স, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন, বরিশাল জেলায় আইটি পার্ক স্থাপন, শহীদ স্মরণিকা ডিগ্রী কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, মেহেন্দিগঞ্জ মহিলা কলেজের ৪র্থ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ, শহীদ সুকান্তবাবু শিশুপার্ক, মিয়ারচর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, বাহাদুরপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন হতে চরবাড়ীয়া এলাকা রক্ষা প্রকল্প, বরিশাল জেলা সদরের সাথে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সদরের যোগাযোগ ও ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য মাসকাটা নদীর উপর ক্রসড্যাম নির্মাণ, বরিশাল জেলার সাতলা-বাগধা প্রকল্পের পোল্ডার পুনর্বাসন প্রকল্প, হিজলা উপজেলার মেমানিয়া হিজলা-গৌরনদী, হরিনাথপুর ও ধুলখোলা ইউনিয়নে সাবমেরিন ক্যাবল ও ৩৫০ কি. মি. বিদ্যুত্ বিতরণ লাইন নির্মাণ করে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম, দুধল ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্স নির্মাণ।