বসনিয়ার ক্যাম্পে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যেমন আছেন
বসনিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পরিস্থিতি তুলে ধরতে সেখানে গিয়েছেন ডয়চে ভেলে বাংলার দুই সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম ও অনুপম দেব কানুনজ্ঞ। প্রথমে তারা ক্যাম্পের বাইরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরেন। শুরুতে মিরাল ক্যাম্পে প্রবেশের অনুমতি না পেলেও বুধবার সেই সুযোগ পান তারা। ক্যাম্পে বাস করা বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ডয়চে ভেলেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান। বসনিয়া সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের বাধা ও তাদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন তারা।
যেমন সিলেট থেকে আসা শফিক মিয়া তার ডানহাতে থাকা কুকুরের কামড়ের ক্ষত দেখিয়েছেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর অবশ্য পুলিশই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। হাতে ১২টি সেলাই থাকা শফিক মিয়া এরপরও আবার ক্রোয়েশিয়া ঢোকার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। আবারও এমন হামলার সম্ভাবনা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নসিবে থাকলে আবার এমন হবে।’ এরপরও দেশে ফিরে যেতে চান না শফিক মিয়া। তাঁর মতে, ‘‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ, দেশে গিয়ে কোনো লাভ নেই।” তবে পরিচিত কেউ এভাবে ইউরোপে আসতে চাইলে তিনি না করবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমিতো বুঝি নাই এমন অবস্থা হবে তাইলেতো আসতাম না।’’ শফিকের মতো আরও কয়েকজন অভিবাসনপ্রত্যাশী দাবি করেন, তারা ধারনা করতে পারেননি যে, পথে তাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে।
অবশ্য এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন ক্যাম্পে ছয়মাস ধরে থাকা আরেক বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী সোহেল। তার দাবি, তারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন, মিথ্যা কথা বলছেন। নিজের কথা জানাতে গিয়ে সিলেট শাহপরানের সোহেল বলেন, ‘‘আমি দেশ থেকেই জেনে এসেছি যে আমার প্রথমে ইরান যেতে হবে, এরপর নানা পথ পেরিয়ে তুরস্ক হয়ে ইটালি পৌঁছতে হবে। আমার অন্ন থাকবে না, বস্ত্র থাকবে না, বাসস্থান থাকবে না, কোনো কিছু থাকবে না, এগুলো আমার সহ্য করে যেতে হবে। ১৮-২০ লাখ টাকা খরচ হবে। এগুলো আমি জেনেই আসছি।’’
রুহুল আমিন নামের আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী ডয়চে ভেলেকে তার ভেঙে যাওয়া বাম হাতটি দেখান। ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবে পুলিশের হাত মার খেয়ে তার এই অবস্থা হয়েছে বলে জানান তিনি। জাগরেবে পুলিশ ধরার পর তাকেসহ আরও কয়েকজনকে ৩০ ঘণ্টা বন্দি রেখে পরে বসনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়েছেন শামীম আহমেদ। এরপরও রুহুল আর শামীম দেশে ফিরতে চান না। আবারও তারা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে চান। মিরাল ক্যাম্পে সাতশ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকে দেয়াল টপকে ক্যাম্পে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে থাকেন। একসময় নিরাপত্তা কর্মীরা বহিরাগতদের ক্যাম্প থেকে বের করে দিলেও এখন শীত আসায় সেই কাজে ঢিলে দেয়া হয়েছে বলে জানান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ফলে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকছেন তারা।
মিরাল ক্যাম্প যে এলাকায় অবস্থিত তার নাম ভেলিকা ক্লাদুসা। সেখানকার স্থানীয়রা ক্যাম্পটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এজন্য তারা বিক্ষোভও করেছেন। তবে ক্যাম্পের ব্যবস্থাপক আইওএম কর্মকর্তা মিতে চিলকোভস্কি জানান, শিগগিরই ক্যাম্পটি বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং বাইরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য আরও একটি ক্যাম্প খোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। চিলকোভস্কি জানান, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের তিনবেলা খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাদের অন্য সামগ্রীও দেয়া হয়। এছাড়া স্থানীয় ডাক্তারদের দিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে থাকা আহত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। করোনার কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। তবে চিলকোভস্কির দাবি, ঘণ্টায় দশজনকে বাইরে যেতে দেয়া হয়। কারণ সাতশজন একসঙ্গে বের হলে স্থানীয়রা সমস্যা পড়তে পারেন। চিলকোভস্কি জানান, প্রতি সপ্তাহের বুধবার ক্যাম্পে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার কথা শোনা হয় এবং সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।-পূর্বপশ্চিমবিডি