বার্তা ডেস্ক:: বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের দেশ উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এখন এখানকার ‘সস্তা শ্রমের’ লোভ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের না দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শনিবার রাতে বেটার বাংলাদেশ ফোরাম (বিবিএফ) এর যুগপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “দক্ষতা অর্জন চলছে আরও দক্ষতা অর্জনে ধারাবাহিক উন্নয়নও চলমান রয়েছে। এবং কঠোর পরিশ্রম করব কিন্তু আমার ন্যায্য পাওনা আমাদের দিতে হবে। এটাই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ।

“আমাদের মানবিক বিনিয়োগ দরকার, অমানবিক নয়। সারা বিশ্বেই এখন মানবতার জয়গান চলছে। সেখানে আমাদের দেশে সস্তা শ্রমের জন্য এ দেশে বিনিয়োগ করা অমানবিক হবে।” এই কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের আশায় বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিবিএফ চেয়ারম্যান ড. মাসুদ এ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদুত নাওকি ইতো। সংলাপে এম এ মান্নান আরও বলেন, “বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রে একটি দক্ষ জনবলের দেশ। একটি বিদেশি কোম্পানি শুধুমাত্র সস্তা শ্রম নেওয়ার জন্য এখানে বিনিয়োগ করবেন এটা হতে পারে না।

“পৃথিবীর অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতই বাংলাদেশ ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে। তাই বিনিয়োগকারী এবং বাংলাদেশ দুই পক্ষের জন্যই (উইন উইন) সমান অবস্থান থেকে বিনিয়োগ হতে হবে।” একটি বিনিয়োগবান্ধব দেশ হতে প্রয়োজনীয় সবই করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য যেসকল সুযোগ সুবিধা দরকার তার সবটাই সরকার করে দিচ্ছে। “বিশেষ করে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অসামান্য উন্নয়ন করেছি। বিশেষ করে আমাদের সড়ক পরিবহণ ও জলপথের যোগাযোগ এখনও বিশ্বমানের নিরাপদ না হলেও আমরা নিরাপদ করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

শহরের বাইরেও গ্রামে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ পানি, যাতায়াত ব্যবস্থা এবং নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসময় সদ্য পাস হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটকে বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “নতুন বাজেট ব্যাবসায়ীদের দ্বারা, ব্যবসায়ীদের জন্য এবং ব্যবসায়ী বাজেট করা হয়েছে।” টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ সৃষ্টি নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার বনানীতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত আলোচনা সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।  অভিসাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রেখে এখন ‘ওড়ার’ মত অবস্থায় পৌঁছেছে, যোগ করেন তিনি।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, “বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজীকরণ আমাদের বিরামহীন প্রতিশ্রুতি।“বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা কোম্পানি টু কোম্পানি সম্পদ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজ করেছি। ৪৭টি বিনিয়োগ সেবা ওয়ান স্টপে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আর্থিক লেনদেন সহজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যাতে ব্যবসা করা সহজ হয়।

 তথ্যপ্রযুক্তি ও অটোমোবাইল খাতে বেশি বিনিয়োগ আশা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই দুই খাতসহ আরও কয়েকটি খাতে বেশি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আশা করি বিনিয়োগকারীরা সেসব সুযোগ সুবিধা নেবেন।” জাপানের রাষ্ট্রদুত নাওকি ইতো বলেন, “জাপান ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি কার্যক্রমকে ভবিষ্যতের উপযোগী করতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করছে।

“আকাশ যোগাযোগ সুচারু করতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে মেট্রোরেলের মত অবকাঠামোতে অর্থায়ন করছে।” বাংলাদেশে জাপানের ৩০০ ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করেছে এবং আরও বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে মিৎসুবিসিসহ আরও কয়েকটি কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। এই বিনিয়োগ আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।“

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn