রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপি, অ্যাটর্নি জেনারেল, আর্মির শীর্ষ পদধারী ছাড়াও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা পালনকারী সচিবরা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী হওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও মার্কিন প্রশাসন তা সহ্য করে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইনের উদ্ধৃতি দিয়ে এই তথ্য দিলেন মার্কিন অ্যাটর্নি অশোক কর্মকার। নাগরিকত্ব গ্রহণের পর লাখ খানেক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের পাশাপাশি বাংলাদেশের পাসপোর্ট ধারণ করছেন। এদের অধিকাংশই দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রয়োজনবোধ করেননি। একই সঙ্গে দুই দেশে পাসপোর্ট ব্যবহার করা কতটা আইনসিদ্ধ, এর সুবিধা ও সমস্যা কী তা নিয়ে সৃষ্ট গুঞ্জনের পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কের অশোক কর্মকার বলেন, বাংলাদেশে গিয়ে কেউ যদি কোনো বিপদে পড়েন তাহলে মার্কিন দূতাবাস দুটি পাসপোর্ট ধারণের কারণে তাদের কোনো রকম সহায়তা দিতে পারবে না। একইভাবে তাদের বাংলাদেশের সহায়-সম্পদ, আয়-ব্যয়ের বার্ষিক বিবরণী উভয় দেশের ট্যাক্স বিভাগকে অবহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু পাসপোর্টধারী নন, গ্রিনকার্ডধারীদের জন্যও বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অ্যাটর্নি কর্মকার জানান, জন্মগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরাও) বাংলাদেশের কোনো নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই যারা দেশে গিয়ে নির্বাচনে কিংবা রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান, তাদের আইনজ্ঞর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ যখনই রাজনীতিতে/প্রশাসনে আপনার গুরুত্ব বাড়বে, তখনই প্রতিপক্ষের লোকজন মার্কিন দূতাবাসে/স্টেট ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করবেন এটাই স্বাভাবিক। এর আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ‘বিপদমুক্ত’ থাকা যাবে। ইতিমধ্যে বেশ কজন এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছেন বলে জানা গেছে। আরেকটি বিষয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার সময় ঢাকা এয়ারপোর্টে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদর্শন করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে ফেরার সময় অবশ্যই মার্কিন পাসপোর্ট দেখাতে হবে। সে সময় এয়ারপোর্টে অভিবাসন কর্মকর্তার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, ‘আপনি কখন বাংলাদেশে ঢুকলেন?’ এ জন্যই উভয় ক্ষেত্রে মার্কিন পাসপোর্ট প্রদর্শন করা উচিত। এ অবস্থায় যারা রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, এমপি অথবা রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে অধিষ্ঠিত নন, তারা দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং দুটি পাসপোর্ট বহন করলে কোনো সমস্যা হবে না।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশেও ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় আনা হচ্ছে। আরও উল্লেখ্য, জন্মগতভাবে বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট গ্রহণের সময় ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি উল্লেখ করতে হয় এবং তা মার্কিন পাসপোর্টেও উল্লেখ থাকে। এ অবস্থায় দ্বৈত নাগরিকত্বের আদৌ প্রয়োজন হয় না বলে কর্মরতরা মনে করছেন। কনসুলেট থেকে যখন ‘নো ভিসা রিকয়্যার্ড’ সিল নিচ্ছেন, তখনই রাষ্ট্র স্বীকার করছে যে আপনি বাংলাদেশেরও নাগরিক। এ ছাড়া সহায়-সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অথবা মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনায় যে আইডি প্রয়োজন, সেটি এনআইডি পূরণ করবে। তাই অযথা দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় কোনো বিপদে পড়লে মার্কিন দূতাবাসের সহযোগিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করাই শ্রেয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn