বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও ৪টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ঋণ সহযোগিতা, সাইবার নিরাপত্তা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বর্ডার হাট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়। প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার দুপুরে হায়দ্রাবাদ হাউজের কনফারেন্সের বলরুমে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই ও হস্তান্তর করা হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোট ২২টি চুক্তি ও ৪ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে এক টুইটে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে। এর আগে ওই ভবনের ডেকান স্যুইটে দুই নেতা একান্ত বৈঠকের পর হায়দ্রাবাদ হাউজের বলরুমে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা ও মোদী।

অনুষ্ঠানের পরের পর্বে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী হিন্দি ভাষায় ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ মোড়ক উন্মোচন করেন। এদিকে মোদি এক টুইট বার্তায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা এবং চুক্তি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন। বেলা ১টায় হায়দ্রাবাদ হাউজের ব্যাংকোয়েট হলে নরেন্দ্র মোদীর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল সাড়ে ৩টায় মানেক শ সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সাত শহীদ পরিবারের সদস্যের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেবেন তিনি। সেখানে মোদীরও বক্তব্য দেওয়ার কথা রয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় মাওলানা আজাদ এভিনিউয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে শেখ হাসিনার। এর আগে সকাল ৯টায় শেখ হাসিনার গাড়ি রাষ্ট্রপতি ভবনের অভ্যর্থনাস্থলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের অশ্বারোহী দল তাকে অনুষ্ঠান মঞ্চের কাছে নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠলে নরেন্দ্র মোদী তাকে অভ্যর্থনা জানান। এসময় শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। গার্ড পরিদর্শনের পর মন্ত্রীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন মোদী। এরপর শেখ হাসিনাও তার সফরসঙ্গী মন্ত্রীদের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

রাষ্ট্রপতি ভবনের এই অনুষ্ঠানের পর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। শুক্রবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ ‘আকাশ প্রদীপ’ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। এসময় বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিক কোরের সদস্যরা। ঐতিহাসিক সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী প্রায় সাড়ে তিনশ। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির নেতৃত্বে ২৫৭ সদস্যের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। ১০ এপ্রিল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। বিকালে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে দিল্লী ত্যাগ করবেন। শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টা ৫ মিনিটে নয়াদিল্লির বিমান পালাম বিমান ঘাঁটির বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা।

শেখ হাসিনা দিল্লিতে পৌঁছানোর পর দু’টি টুইট করেছেন নরেন্দ্র মোদী। এর একটি টুইটে তিনি বলেন, ‘ভারতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরে তাকে স্বাগত জানাতে পেরে আমি আনন্দিত।’ অপর টুইটে মোদী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি দুই জাতির সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’ শুক্রবার বিকেলেই রাষ্ট্রপতি ভবনের লবিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এরপর রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর দেওয়া অভ্যর্থনা ও নৈশভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রণে প্রথম কোনো দেশের সরকার প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকছেন হাসিনা। ২০১০ সালের পর শেখ হাসিনার প্রথম দ্বিপক্ষীয় এ সফরকে বিরল ঘটনা হিসেবে দেখছেন দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিক কর্মকর্তারা। এদিকে শেখ হাসিনার সফর সামনে রেখে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির রাস্তায় উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা, শোভা পাচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছবি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn