বাকিংহাম প্যালেসে রানির হাত থেকে সম্মাননা নিলেন বাংলাদেশের সাজিদ-রাহাত
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কুইন্স ইয়ং লিডার’ পুরস্কার চালু করে যুক্তরাজ্য সরকার। এ বছর বাণিজ্যিক ও ঘরোয়া পরিবেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার এবং জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তারুণ্যের শক্তির ব্যবহারের স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশি সাজিদ ইকবাল ও রাহাত হোসেন। ২৯ জুন বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসে কমনওয়েলথভুক্ত ৩৬টি দেশের অর্ধশতাধিক বিজয়ীর হাতে তার নামে চালু করা এ বছরের কুইন্স ইয়ং লিডার পুরস্কার তুলে দিয়েছেন রানি এলিজাবেথ। পরে লন্ডনের অস্ট্রেলিয়া হাউজে পুরস্কার বিজয়ী ও অতিথিরা মিলে ২০১৮ সালের কুইনস ইয়ং লিডার কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু করেন। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- প্রিন্স হ্যারি, স্যার মো ফারাহ, লিয়াম পেইন, ডেম তান্নি গ্রে-থম্পসন, অনিতা রানি, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কুইন এলিজাবেথ ডায়মন্ড জুবিলি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জন মেজর।
সাজিদ ইকবাল (বামে) ও রাহাত হোসেন (ডানে)।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে সাজিদ ইকবাল (২৫) বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালি পরিবেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়াতে কাজে অবদান রেখেছেন। আর রাহাত হোসাইন (২৬) কাজ করছেন প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশে দুর্যোগকালীন জরুরি ত্রাণ সেবা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার উন্নতিতে। রাহাত হোসেন ও সাজিদ ইকবাল দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রাহাত হোসেন ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। ২০১৪ সালে জেনিফার ফেরেল নামের একজন মার্কিন তরুণীর সঙ্গে শুরু করেন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ক্রিটিকালিংকের কাজ।
দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা দেয় তার প্রতিষ্ঠান। তাদের এই কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় এক হাজার তরুণ। রাহাত বলেন, ‘প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ছাড়াও আমরা বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’ তিনি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মসূচি সমন্বয়ক। অন্যদিকে সাজিদ ইকবাল অবশ্য তার পড়াশোনার বিষয়কেই কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। চেঞ্জ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন ২০১২ সালে। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক। পরিবেশ রক্ষায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার সাজিদের কাজের মূল লক্ষ্য। তার প্রতিষ্ঠান সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছিল ‘বোতলবাতি’ নামের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। দিনের বেলায় বস্তির অন্ধকার ঘরে সূর্যের আলো ব্যবহার করে তৈরি হতো এই বোতলবাতি। সাজিদ ইকবাল বলেন, ‘শুধু ঘরে না, এখন আমরা বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিবেশসাশ্রয়ী বাতি পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছি। ‘সোলার পাইপ লাইট’ নামে এই প্রকল্পের কাজ চলছে।’
রাহাত হোসেন (বামে) ও সাজিদ ইকবাল (ডানে)।
পুরস্কারের অংশ হিসেবে বিজয়ীরা তাদের নেতৃত্ব বিকাশে যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পাবেন। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জীবন বদলে দিয়েছে এমন প্রকল্পগুলোও বছরজুড়ে দেখার সুযোগ পাবে বিজয়ীরা। রানির কাছ থেকে পুরস্কার নেওয়ার আগে বিজয়ীরা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে এক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকের যুক্তরাজ্য অফিস পরিদর্শন করেন। এছাড়া সংবাদমাধ্যম বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের এক কর্মশালায়ও অংশ নেন বিজয়ীরা। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর হাজার হাজার তরুণের মধ্য থেকে পুরস্কারপ্রাপ্তদের বাছাই করা হয়েছে। ২০১৪ সালে প্রবর্তিত এ অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ সালেই শেষ বারের মতো দেওয়া হবে।