‘বাচ্চাদের মেরে ফেললাম, আমার লাশ পাবে রেললাইনে’
বার্তা ডেস্ক :: রাজধানীর দক্ষিণখানের ফ্ল্যাট থেকে মা ও দুই শিশুসন্তানের লাশ উদ্ধারের পর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরি ও একটি হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ডায়েটিতে লেখা বার্তা হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের বড় নিয়ামক। এতে লেখা আছে- ‘বাচ্চাদের মেরে ফেললাম, আমার লাশ রেললাইনে পাওয়া যাবে।’ পুলিশের ধারণা, হাতের লেখাটি দুই শিশুর বাবা বিটিসিএলের উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবউদ্দিন ভূঁইয়ার হতে পারে। ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে পাওয়া গেলে হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হবে। জুয়া ও মাদকাসক্ত হয়ে কোটি টাকার বেশি ঋণ করে ফেলেছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের এই কর্মকর্তা। এ কারণে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে স্ত্রী মুন্নি রহমান ও দুই সন্তানকে হত্যার পর গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি। পুলিশ বলেছে, হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুন্নীকে, আর দুই শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। মুন্নীর স্বামী রাকিবউদ্দিন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) উত্তরা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায়। পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ডায়েরির লেখাটি রাকিবউদ্দিনের বলে মনে হচ্ছে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ওই একটি লাইন ছাড়া খুনের বিষয়ে আর কিছু লেখা ছিল কিনা, সে বিষয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। শুক্রবার রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগান রোডের পাঁচতলা বাড়ির চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে মা মুন্নি, ১২ বছরের ছেলে ফারহান উদ্দিন ভূঁইয়া ও তিন বছরের মেয়ে লাইবার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন-চার দিন আগে তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা পুলিশের। মুন্নিকে মাথায় আঘাত করে এবং দুই শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মুন্নির লাশের পাশ থেকে একটি হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই হাতুড়ি দিয়ে মুন্নির মাথায় আঘাতের কারণে মাথার ভেতর গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় মুন্নির ভাই মুন্না রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে শনিবার দক্ষিণখান থানায় মামলা করেছেন। শনিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে মা ও দুই সন্তানের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে রাতে লাশ দাফন করা হয় বনানী কবরস্থানে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক কেএম মইন উদ্দিন জানান, মুন্নির মাথায় পাঁচটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ছেলে ফারহানের গলায় চিকন ফিতা পাওয়া গেছে। এই ফিতা দিয়ে গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটিকে গলা টিপে ধরার চিহ্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, মুন্নির বোনের দেবর (বেয়াই) রাকিব উদ্দিন ভূঁইয়া লিটনের সঙ্গে প্রেম করে অন্তত ১৪ বছর আগে বিয়ে হয় তার। দক্ষিণখানের যে ফ্ল্যাট থেকে মুন্নি ও ২ সন্তানের মৃতদেহ পাওয়া গেছে ওই বাসায় ২০১১ সাল থেকে ভাড়া ছিলেন তারা। বিটিসিএলের একজন কর্মকর্তা জানান, গত সপ্তাহে রাকিব গুলশান থেকে উত্তরা বিটিসিএলে বদলি হয়ে এসেছেন। যোগদানের পর অফিস করেছেন কিনা তা তিনি জানাতে পারেননি। তবে ইতোমধ্যে পুলিশ রাকিবের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে বিটিসিএলে। মুন্নির মামাতো ভাই তানভীর রহমানকে জানান, বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে মুন্নির স্বামী রাকিব ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণ নেয়া টাকা কী করেছেন, তা আত্মীয়স্বজন কেউ জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। প্রতিবেশীরা জানান, রাকিব অনলাইনে জুয়া খেলতেন। এ কারণে তিনি ঋণগ্রস্ত হতে পারেন। দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে– দুই সন্তানসহ মুন্নিকে রাকিব খুন করেছেন। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সৌজন্যে : যুগান্তর