বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ঠাঁই নেই
অন্যদিকে কমলাপুর এবং এয়ারপোর্ট স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী অপেক্ষায় ছিলেন বাড়ি ফেরার। ট্রেনগুলোতে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। ছাদে চড়ে ও দরজায় দাঁড়িয়ে ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ট্রেনের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা। বাধ্য হয়ে মানুষ প্রখর রৌদ্রের মধ্যে ট্রেনের ছাদে চড়ে পলিথিন মুড়িয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। বেশি যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলোকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে হয়েছে। কারণ আসন কিংবা টিকিট না পাওয়া গেলেও ঈদে বাড়িতে যে যেতে হবে। ট্রেনের দরজায় ঝুলে, ছাদে উঠে অনেকে গন্তব্যে গেছেন। ভিড়ের কারণে কেউ কেউ চেষ্টা করেও ট্রেনে উঠতে পারেননি।
আর টিকিট করে সিট পেলেও অনেকে সিট খোঁজে পাননি। স্টেশনে পুলিশ যাত্রীদের ছাদে উঠতে বাধা দিলেও কিছুক্ষণ পর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আবার ছাদে উঠেছেন ঘরমুখো মানুষ। আর প্রতিদিনই শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছিল। ঈদের বিশেষ ট্রেনের ক্ষেত্রে এ ঘটনা বেশি ঘটছে। ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা ৩১শে মে থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। ওই দিন থেকেই বিভিন্ন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। গতকালও অনেক ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক দেরি করে ছেড়ে গেছে। কমলাপুর স্টেশনের প্যাটফর্মগুলোর কোথাও ফাঁকা ছিল না, সব দিকে যাত্রী আর যাত্রী। স্টেশনে পৌঁছানোর পর যারা কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দেখা পেয়ে যাচ্ছেন তারা ছুটছেন গন্তব্যে, বাকিরা থাকছেন অপেক্ষায়। সকাল ৮টার নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়েছে বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। ট্রেনটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কামাল হোসেন। তিনি বলছিলেন নিজের ক্ষোভের কথা। বিলম্বে ছেড়েছে লালমনিরহাট এক্সপ্রেস। ট্রেনটি ছাড়ার কথা ছিল ৯টায়, ছেড়েছে পৌনে ১১টায়। এ ছাড়া বিলম্বে ছেড়েছে রংপুর এক্সপ্রেস, ইশা খাঁন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি। ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয় নিয়ে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, সারাদিনে কমলাপুর থেকে ৫২টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। দুই-একটি ট্রেন বিলম্বিত হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যেন সঠিক সময়েই সব ট্রেন ছেড়ে যেতে পারে।
এদিকে সকাল থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল গ্রামমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। যাত্রী বেশি থাকায় লঞ্চগুলো তাড়াতাড়ি ঘাট ছেড়েছে। সিট পাওয়ার জন্য অনেকেই রাত কাটিয়েছেন টার্মিনালে। এমন একজন ভোলাগামী যাত্রী হাসান মিয়া। তিনি থাকেন নারায়ণগঞ্জ। গত রোববার রাতে এসে টার্মিনালে ঘুমান। কারণ হিসেবে বললেন, সিট না পেলে অনেক কষ্ট হয়। তার পক্ষে এক হাজার থেকে ১২শ’টাকার কেবিন নিয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাড়িতে যেতে কষ্ট হলেও গ্রামে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ অন্যরকম মজা। রাস্তায় সিএনজি ভাড়া দ্বিগুণ। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী প্রায় সব লঞ্চের ছাদে যাত্রীদের দেখা গেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদযাত্রায় বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে লঞ্চ ছেড়েছে। অন্যদিকে ভোর থেকে গাবতলী-মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের বেশ ভিড় ছিল। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ইউনিক পরিবহনেরর কর্মকর্তারা বলেন, সকালে যাত্রীর বেশি চাপ ছিল। দুপুরে তেমন যাত্রী নেই। তবে রাতে চাপ বাড়বে। পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। সঠিক সময় ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশ: গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, টার্মিনালগুলো পরিদর্শন করেছি। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ আছে। বাস মালিকরা বলছেন, ফেরার পথে খালি আসতে হয় বলেই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। তাই, বাস মালিকদের বলেছি, সংযমী হোন। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী আরও বলেন, কথায় কাজ হলে দেশ আগেই সোনার বাংলা হয়ে যেত। প্রবলেম আমরাই তৈরি করি। সততা নিয়ে কাজ করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাসে এমন স্বস্তি দায়ক ঈদ যাত্রা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক করা। বৃষ্টি হলে গাড়ি ধীরগতিতে চলতে পারে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। দুরপাল্লার বাসের মধ্যে শাহ ফতেহ আলী, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন ও মানিক এক্সপ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া, রাজধানীর ভেতরে সায়েদাবাদ টার্মিনালে ২১শে পরিবহনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে মোবাইল কোর্ট। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।