বিএনপির পরবর্তী কর্মকৌশল চূড়ান্ত হবে লন্ডনে
ভোটের আগে বিএনপি একটি সর্বাত্নক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে* অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার মাসখানেক আগে এই আন্দোলন শুরু হতে পারে বিশেষ প্রতিনিধি : রাজপথের আন্দোলন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং প্রার্থী চূড়ান্তকরণ সহ বিএনপির আগামী দিনের রাজনীতির কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হবে লন্ডনে। এ জন্য আগামী সপ্তাহে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডনে যাচ্ছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে সব ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মকৌশল চূড়ান্ত করবেন দলের দুই শীর্ষ নেতা। বিএনপির সূত্রমতে, আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে বিএনপি, ২০-দলীয় জোট, রাজনৈতিক সমমনা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা ধরনের মত রয়েছে। এসব মত বাহারি হলেও বিভিন্ন কারণে যৌক্তিক। তবে সবার মত গ্রহণ করার সুযোগও নেই। সঙ্গত কারণে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মকৌশল ও দিনক্ষণ ঠিক করার প্রয়োজন অনুভব করছে বিএনপি। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তাবাবনা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে যাচ্ছেন দলের মহাসচিব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনিক জটিলতা, নেতাকর্মীদের কৌতুহল এবং তদবিরের বিষয়টি মাথায় রেখে মির্জা ফখরুলের লন্ডন সফরের বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। আজ তার লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইফতার পার্টিসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় তিনি ১ বা ২ জুন লন্ডন যাবেন।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে আভাষ পাওয়া গেছে, নির্বাচনের আগে তারা সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচন কমিশনের অক্টোবর নাগাদ জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করার কথা বলেছে। বিএনপির আন্দোলন সেই তফসিল ঘোষণার মাসখানেক আগে শুরম্ন হতে পারে। এর প্রস্তুতি হিসেবে রোজার ঈদের পর বিএনপিপ্রধানের কারামুক্তির দাবির পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত্ম রয়েছে। ২০-দলীয় জোটকেও বিএনপি ‘কারামুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচন’ এই যুগপৎ দাবিতে মাঠে নামাতে চায়। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আগামীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির ছক কেমন হবে, সে বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সিনিয়র নেতাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন্। পাশাপাশি সামগ্রিক আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দলের মহাসচিবকে ডেকে পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, আন্দোলনের সম্ভাব্য সময় চূড়ান্তকরণের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে বিএনপির মাঠের অবস্থা, ৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা, মাঠ জরিপ, আগ্রহী প্রার্থীদের কার অবস্থা কেমন, ২০-দলীয় জোটের চাহিদাসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যাবেন মির্জা ফখরুল , যাতে আগামীতে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে তেমন অসুবিধায় পড়তে না হয়। এ ছাড়া আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলের সাংগঠনিক সর্বশেষ অবস্থাও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করবেন মহাসচিব। দলীয় বিষয় ছাড়াও ২০-দলীয় জোটের বাইরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর জোটে অন্তর্ভুক্তি বা যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেসব বিষয়েও শীর্ষ দুই নেতা আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়া ও সেনা মোতায়েনসহ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্নে সমঝোতা করেই বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়। আর এটি আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হতে পারে। আর সেটা দ্রম্নত সময়ের মধ্যেই শুরম্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই দিনক্ষণ শিগগিরই চূড়ান্ত্ম করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
দলের পরবর্তী কর্মকৌশলের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন বিএনপির কর্মসূচির যে ধরন, সব সময়ই যে এরকমই থাকবে, সেটা বলা যাবে না। আদালতে আইনি লড়াই করে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। মুক্তি হবে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে। সময় সময়ই বলে দেবে কী ধরনের আন্দোলন হবে। দলীয়ভাবে আলোচনা করেই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।