বিচ্ছেদের ঢেউ যেন ছোট্ট সামি সিদ্দিকীর জীবনে সুনামি
প্রবাস ডেস্ক:: মা থাই। বাবা বাংলাদেশি। মা-বাবার বিবাহিত জীবনে অকস্মাৎ বিচ্ছেদের ঢেউ যেন সুনামি হয়ে এসেছে ছোট্ট সামি সিদ্দিকীর জীবনে। মা থেকেও নেই। বাবাও কর্মসূত্রে সেই মায়ের দেশে। এ ভাবেই পিতা-মাতার স্নেহের বঞ্চনা নিয়ে বাংলাদেশের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠছে থাই শিশু সামি। জন্মসূত্রে থাই নাগরিক এ সন্তানের জন্য বাংলাদেশে মন পড়ে থাকে জামান সিদ্দিকীর (৪১)। মোবাইল ফোনে পুরনো দিনের ছবিগুলো দেখেন, আর বুক ফাঁটা কষ্টে ছলছল করে ওঠে জামানের দুচোখ। জীবনের এই কাহিনী বলতে গিয়েই আবেগে কণ্ঠ ধরে আসে তার।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার নবীগঞ্জ মহল্লার মৃত সমন আলীর ছেলে জামান সিদ্দিকী। তিন ভাই, তিন বোনের সবার ছোট জামান ভাগ্য বদলাতে ২০০১ সালের ডিসেম্বরে পাড়ি জমান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে। খালি হাতে এসেছিলেন এদেশে। ব্যাংককে ছিলেন টেইলারিং দোকানের কর্মচারী। ভালোবেসে বিয়ে করেন মুসলিম থাই নাগরিক সোফিয়া লেককে। তারপর কেবলই এগিয়ে চলা। জীবন সঙ্গীকে নিয়ে চলে গেলেন কোসামুই দ্বীপে। পরে লামাই বিচ এলাকায় গড়ে তুললেন নিজের দোকান, গাড়ি-বাড়ি সবই হলো। এলো কোলজুড়ে ফুটফুটে সন্তান সামি। সামির যখন এক বছর বয়স তখন অসুস্থ মাকে দেখতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে দেশে গেলেন। ইচ্ছে ছিল মাস খানেক থাকবেন। তবে স্ত্রীর চাপাচাপিতে সপ্তাহ না হতেই ফিরলেন থাইল্যান্ডে। তারপরই যেন বয়ে গেলো ঝড়। দাম্পত্য জীবনে নেমে এলো সুনামি!
সন্তান ও স্বামীকে ছেড়েই চলেই গেলেন সোফিয়া লেক। বিপর্যয় নেমে এলো ব্যবসাতেও। এখানকার নিয়ম অনুযায়ী থাই স্ত্রীর বরাতেই জোটে ভিনদেশি স্বামীর বসবাসের ভিসা। ব্যবসা-বাণিজ্যও থাকে স্ত্রীর নামে। হুট করে স্ত্রী ছেড়ে চলে যাওয়ায় সবই হারাতে হয় তাকে। কর্মহীন, নিঃস্ব অবস্থায় গভীর শুন্যতা নিয়ে কোসামুই দ্বীপ ছেড়ে চলে আসেন আন্দামান সাগর পাড়ে থাইল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলীয় দ্বীপ ফুকেটে। আদরের সন্তানকে পাঠিয়ে দেন দেশে। সে এখন বড় হচ্ছে জামানের বড় বোন (ফুপু) আছমা সিদ্দিকীর কাছে। তাকেই মা বলে ডাকে সামি। থাকছে নরসিংদী সদরের পূর্ব দত্তপাড়ায়। ফুপুর বাড়িতেই। সেখানকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সে। এদিকে কোসামুই দ্বীপ থেকে ফুকেটে এসে শুন্য থেকেই চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়াতে। পাতং সৈকত এলাকায় গড়ে তুলেছেন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, বুটিক ও টেইলার্সের ব্যবসা।
জামান সিদ্দিকী বলেন, ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস। এখানে আমাকে থাকতে হয় ম্যারেজ ভিসায় কারো করুণায়। অন্যদিকে থাই নাগরিক হিসেবে আমার সন্তান বেড়ে উঠছে বাংলাদেশে। সেখানকার আবহে। থাই হওয়ার সুবাদে থাইল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হয় সামির। বিশেষ দিবসগুলোতে পরিবারসহ আমন্ত্রণও জানানো হয়। অথচ একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকবার প্রত্যাশায় থাইল্যান্ডের এ দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে ছুটে বেড়ানো জামানদের খবরই রাখে না কেউ! দেশে থাকা সন্তানের ছবি দেখে যখন বুকের ভেতরটা হাহাকার করে জামানের তখন মা আর বাবার স্নেহ বঞ্চিত শিশু সামির কষ্টের কথাই বা বোঝে কজন!