বিজিবির আটককৃত ৪ গরু নিয়ে তাহিরপুর থানায় অভিযোগ করলেন কৃষক আব্দুল জলিল
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : ভারতের সীমান্ত হতে বিজিবি কর্তৃক আটককৃত ৪টি বাংলাদেশী গরু ফেরত প্রদানের দাবী জানিয়েছেন কৃষক মোঃ আব্দুল জলিল। উপায়ান্তর না পেয়ে ৪ জুন সিলেটের বিজিবি সেক্টর কমান্ডার এর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন তিনি। একই বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক ও তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছেও লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তিনি। জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মুকসেদপুর গ্রামের শুকুর মোহাম্মদ এর পুত্র কৃষক আব্দুল জলিল এর ৩টি গরু ও তার বড় ভাই জালাল মিয়ার ১টিসহ মোট ৪টি গরু গত ২রা জুন বুধবার ঘাস খেতে খেতে ভারত সীমান্তে চলে চায়। একপর্যায়ে গরুগুলো আটক করে ফেলে বিএসএফ। ঘটনাটি দেখে আব্দুল জলিলের ১২ বছরের কিশোর পুত্র ইমন ভয় পেয়ে বাড়ীতে দৌড়ে এসে বিএসএফ কর্তৃক গরু আটক করার ঘটনা তার পিতাকে জানায়। অসহায় পিতা সাথে সাথে ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া কে নিয়ে লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের ইনচার্জের কাছে তার নিজের গরুগুলো আটক করার কথা অবগত করেন। ৩ জুন বৃহস্পতিবার সীমান্ত এলাকা হতে আটককৃত ঐ গরুগুলো পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত পান বিজিবি। লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প ইনচার্জ বিএসএফ এর কাছ থেকে উদ্ধার করা গরু ৪টি গরু পার্শ্ববর্তী মাছিমপুর বিজিবি ক্যাম্পের কাছে প্রেরণ করেন। মাছিমপুর বিজিবি ক্যাম্প ইনচার্জ উদ্ধারকৃত গরুগুলো সুনামগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়নে প্রেরণ করেন বলে জানান। ঘটনাটি জানতে পেরে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনাসিন্দু চৌধুরী বাবুল,কৃষক আব্দুল জলিল ও তার ভাইয়ের ৪টি উদ্ধারকৃত গরু তাদেরকে সমজিয়ে দেয়ার জন্য দুই ক্যাম্প ইনচার্জসহ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে অনুরোধ করেন। বাদাঘাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া ও সাবেক মেম্বার তোতা মিয়া বলেন,পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ,কৃষক আব্দুল জলিল ও তার ভাইয়ের ৪টি গরু লাউড়েরগড় বিওপির কাছে হস্তান্তর করেছে। এই গরুগুলির গায়ের রং হচ্ছে কালো। কিন্তু বিজিবি কর্তৃক ভারত হতে চোরাইকৃত ৪টি গরু আটক ও জব্দ করত: যে ছবি অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো দেখা যাচ্ছে লাল রঙের গরু। আসলে ঐ গরুগুলো ২রা জুন বুধবারের আটককৃত গরু কিনা সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি ২রা জুনের আগে ঐ গরুগুলো ডলুরা বা বনগাঁও বিওপি ক্যাম্প কমান্ডারগন অন্য এক অভিযানে আটক করেছেন। সেই গরুগুলোও বাংলাদেশী গরু। ভারতীয় চোরাই গরু নয়। আমরা ঘটনার পর থেকেই আব্দুল জলিল ও তার ভাইয়ের ৪টি গরু বিজিবির ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে গিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ক্যাম্প কমান্ডার আমাদেরকে বলেছেন তারা এগুলো জব্দ করে মামলা দিয়েছেন। তাই ঐদিন ২রা জুন সন্ধ্যায় আমাদের চোখের সামনে দিয়ে আব্দুল জলিল ও তার ভাইয়ের কালো রঙের ৪টি গরু লাউড়েরগড় ক্যাম্প থেকে মাছিমপুর ক্যাম্পে নিয়ে গেছেন। লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্প ইনচার্জ মোঃ আমিনুল ইসলাম বিএসএফ এর সাথে ৩ জুন বৃহস্পতিবার পতাকা বৈঠক হওয়া বা কোন গরু উদ্ধার হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল তছলিম এহসান বলেন,করোনা সংক্রমনের কারণে পতাকা বৈঠক বন্ধ রয়েছে। তাই পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফএর কাছ থেকে গরু উদ্ধারের কোন প্রশ্নই আসেনা। আমরা যে ৪টি গরু আটক করেছি সেগুলো হচ্ছে চোরাই গরু। নিয়মানুযায়ী এগুলো আমরা জব্দ করেছি। কাস্টমস বিভাগকে অবগত করে চোরাইকৃত গরুগুলো নীলামে বিক্রয় করে প্রাপ্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা করা হবে। তিনি বলেন,এ পর্যন্ত ৪/৫ জন কৃষক চিটি দিয়ে আমাদের কাছে তাদের গরু ফেরত দানের দাবী করছে কিন্তু আমরা জব্দকৃত কোন চোরাই গরু ইচ্ছে করলেই কাউকে ফেরত দিতে পারিনা। নিয়মানুযায়ী অকশনে অংশগ্রহন করে যারা সর্বোচ্চ মূল্যদাতা হবে তারাই গরুগুলো পাবে। অথবা প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্থ যে কেউ এ ব্যাপারে আদালতে যেতে পারে। উল্লেখ্য বিজিবি ব্যাটালিয়নের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,লাউড়েরগড় বিওপির টহলদল গত ৪ জুন বেলা দেড়টায় সীমান্ত পিলার ১২০৬ এর নিকট শূন্য রেখা বরাবর ভারত হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করার সময় তাহিরপুর উপজেলাধীন ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নের মনাপাড়া নামক স্থান হতে ৪টি ভারতীয় ছোট মাঝারী গরু আটক করে যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা। কিন্তু মোকশেদপুর ও মনাইপাড় গ্রামবাসী দাবী করেন,ঐদিন বিজিবির লাউড়েরগড় বিওপির টহলদল কোন ভারতীয় গরু আটক করেনি। যে ৪টি গরু আটক করে জব্দ দেখানো হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশী গরু। এবং ঐ গরুগুলোর প্রকৃত স্বত্তাধিকারী আব্দুল জলিল ও তার ভাই জালাল মিয়া। এদিকে আব্দুল জলিল তার গরু হারানোর ব্যাপারে ৬ জুন তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাহিরপুর থানা ওসি মোঃ আব্দুল লতিফ তরফদার দায়েরকৃত অভিযোগটির তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বাদাঘাট ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোঃ শহীদুল ইসলামকে দায়িত্বভার প্রদান করেছেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোনদিকে মোড় নেয় সেদিকে দৃষ্টি এখন সকলের।