বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য
কেন বিদেশে পড়তে যাবেন?
শিক্ষার ক্ষেত্রটি সবসময়েই প্রসারণশীল। যুগে যুগে শিক্ষার ক্ষেত্রে কখনই নির্দিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং দেশ কাল জাতি সংস্কৃতি প্রভৃতির মাঝে বিস্তৃতিই শিক্ষার মৌলিক ক্ষেত্র ও সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয়। আপনি যদি প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচিত্র দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান তবে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। এখানে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়ার স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি সঙ্গত পয়েন্ট তুলে ধরা হলো।
আত্মসমৃদ্ধি:
যারা বিদেশে লেখা পড়া করেন তারা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কারণে বুদ্ধিমাত্রা ও মননশীলতার দিক থেকে অধিকতর সম্মৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার ফলে তারা অধিক স্বাধীন এবং অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখেন। যে কোন চ্যালেঞ্জিং কাজ বা পেশায় সফল হওয়ার জন্য জরুরি অনেক গুণ তাদের মধ্যে অধিক বিকশিত হয় যা অনেক ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান, এমনকি কখনো কখনো তা ব্যাক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। নতুন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় এবং সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান আপনাকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরে আপনার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন হবে।
প্রস্তুতি নিন:
বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ধারিত চাহিদা আছে। তবে তুলনামূলকভাবে কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে। যেমন-ইংরেজি ভাষাজ্ঞান, জিমেট, স্যাট, জিআরই ইত্যাদি। তাই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে এসব গুরুত্বপূর্ণ কোর্স করে রাখুন। অনেকে মনে করে, বাইরে না গেলে IELTS বা TOEFL করে লাভ কী? কিন্তু এসব জ্ঞান কিন্তু আপনার দেশেও চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনে উপকারে আসবে। তাই নিজেকে যতটুকু সম্ভব প্রস্তুত রাখুন। এছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি কোনো কোর্স না চেয়েও থাকে, তারপরও আপনি CV-তে উল্লেখ করলে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবেন।
সঠিক কোর্স নির্ধারণ
পেশাগত উন্নতি ও লক্ষে পৌছানোর জন্য কোন ধরনের পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করা মন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পেশাগত সফলতা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সেই পেশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহনো কম তাৎপর্যপূর্ন নয়। তাই বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটী কোর্স বেছে নিতে হবে যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে গণ্য হবে।
নিয়মিত খোঁজ-খবর নিন:
এখন কেবল অর্থ থাকলেই সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার মান, সুযোগ সুবিধা, চাহিদা, ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয় প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই আপডেটেট থাকা জরুরি। যেমন, আপনি হয়তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের চাহিদা অনুযায়ী একটা আবেদন করলেন, কিন্তু এ বছর তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। আপনি সুযোগ হারাতে পারেন। কিংবা গত বছর আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে স্কলারশিপ ছিল না কিন্তু এ বছর আছে। না জানার কারণে আপনি সুযোগ হারাতে পারেন। তাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন অনলাইনে, চোখ রাখুন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। বিভিন্ন পেজে অনেক লিংক পোস্ট করা হয়, এগুলো ভাল করে পড়ুন। অনলাইনে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সাইটগুলো ভিজিট করুন। আমাদের পেজের বিভিন্ন সময় পোস্ট করা লিংকগুলো পড়ুন।
লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:
অনেকেই বলেন আমি বিদেশ আসতে চাই বা ইউরোপ আসতে চাই। তারা কোন দেশে আসবেন, কোন বিষয়ে পড়বেন – সেটা নিজেই নিশ্চিত নন। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেধা দিয়ে আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। তাই প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
প্রয়োজনীয় জিনিস প্রস্তুত রাখুন:
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ও স্কলারশিপের সময়সীমা নির্দিষ্ট, যা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় কিছু জিনিস প্রস্তুত রাখুন। CV, Motivation Letter, Recommendation Letter ইত্যাদি। অনেক সময় আবেদন করতে করতেই সময় ফুরিয়ে যায়। আর তা ছাড়া পোস্টে কাগজপত্র পাঠাতেও সময় ও অর্থের প্রয়োজন। তাই সময়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন।
অর্থনৈতিক বিষয়:
আপনি যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী হন তবে বাজেট করুন। আপনার পক্ষে কতটুকু ব্যয় করা সম্ভব, তা জেনে নিন। সে অনুযায়ী আবেদন করুন। কারণ, এসব বিষয় না ভেবে আবেদন করলে পরে আর্থিক সমস্যার কারণে তা ভেস্তে যায় এবং আবেদন বা অন্য খরচগুলো অপচয় হয়। বাজেট করুন এবং সে অনুযায়ী সামনে এগোন।
বিভ্রান্ত হবেন না:
আপনি যদি আত্মবিশ্বাসী হন, কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই কনফিডেন্স খুবই জরুরি। একটা বিষয় মনে রাখবেন, টাকা দিয়ে কখনো ভিসা কেনা যায় না। আপনার যোগ্যতা থাকলেই কেবল আপনি এডমিশন এবং ভিসা পাবেন। তাই প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হবেন না। অনেকে এডমিটেড হওয়ার পরও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভিসা পেতে ব্যর্থ হন। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে ছাত্র হিসাবে গ্রহণ করে, তবে দূতাবাস ভিসা দিতে বাধ্য; যদি না কোনো মেজর ত্রুটি থাকে। তাই দালালের চক্র থেকে দূরে থাকুন আর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অগ্রসর হোন।
আরো কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়
সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসঃ যখন আম্পনি সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরে অবতরন করবেন তখন আপনার সেদেশে আসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময় কাল সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করবেন। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, স্বাস্থ ও প্রতিষেধক সনদ ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন। তারপর তারা ঐ দেশে ঢোকার জন্য আপনাকে অনুমতি দেবেন। ঐ দেশের নিয়ম অনুসারে বা বিভিন্ন সময়ের বা ঋতুর চাপ অনুসারে ইমিগ্রেশনের আইনকানুন ও পদ্ধতি দ্রুত অথবা সময়সাপেক্ষ অথবা ক্লান্তিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময়ের বিমান ভ্রমনের পরে ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর পদ্ধতি আপনার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্ত ধৈর্য ধরে এবং নম্র ভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারের সকল প্রশ্নের জবাব দিন। ইমিগ্রেশনের পর আসবে কাস্টমস। কি কি জিনিস আপনি বহন করছেন তার একটি তালিকা আপনাকে কাগজে লিখতে হতে পারে। এখানেও সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভদ্রভাবে দিন। কাস্টমস অফিসার প্রয়োজনে আপনার ব্যাগ চেক করতে পারেন। সুতরাং তার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করুন।