বিদ্যুৎ ভোগান্তিতে অতিষ্ট শহরে’র জনজীবন
বিপর্যয় ছাড়ছে না সুনামগঞ্জবাসীকে। এবার চলছে বিদ্যুৎ ভোগান্তি। ৩০ এপ্রিল থেকে এই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। ৩০ এপ্রিল রাতে সুনামগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে ঘর-বাড়ির ও স্থাপনার পাশাপাশি আবাসিক ও পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ৪-৫ দিন পর বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও শনিবার রাত ৯ টা থেকে আবারো বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। শনিবার রাত ৯ টায় ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে বিদ্যুহীন হয়ে পড়ে পুরো জেলা। এদিকে, ফিডার বদল করে দূরবর্তী ফিডারের সঙ্গে সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার মধ্য শহরের হাসননগর ও শহীদ আবুল হোসেন রোডের প্রায় ৪০০ গ্রাহককে সংযুক্ত করায় সামান্য বৃষ্টি বা ঝড়ো হাওয়া হলেই ঐ এলাকার গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েন। লোডশেডিংও ঐ লাইনে বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন মধ্যশহরের এই গ্রাহকরা।
৩০ এপ্রিল রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে ছাতক-সুনামগঞ্জ ৩৩ কেভি লাইনের ১০টি খুঁিট এবং সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ১১ ও ৯ কেভির আরো ৩০টি খুঁটি ভেঙে পড়েছিল। গাছপালা উপড়ে পড়ে হেলে পড়েছিল আরো ১৫টি খুঁঁিট। ৩৩ কেভিসহ ১০ কিলোমিটার লাইন ল-ভ- হওয়ায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা শহরের কিছু এলাকাসহ জেলার অনেক এলাকায়ই বিদ্যুৎ ছিল না। শুক্র ও শনিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক হলেও শনিবার রাত ৯ টায় আবারও বিপর্যয় দেখা দেয়। কালবৈশাখী’র আরেক দফা তা-বে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শহরের হাসননগরের জনৈক বাসিন্দা বলেন, ‘হঠাৎ করে আমাদের বিশাল এলাকার বিদ্যুতের ফিডার বদল করে কেন আমবাড়ি ফিডারের সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হলো তার কারণ বোধগম্য নয়। শীত মওসুমে আমরা এটি বুঝতে পারি নি। এখন শহরের অন্যান্য অঞ্চলে যখন বিদ্যুৎ থাকে তখন আমাদের এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এই অসহনীয় অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।’
অন্য এক বাসিন্দা বলেন,‘ঝড়ের তান্ডবে জেলাজুড়েই বিদ্যুতের বিপর্যয়, এরমধ্যে হাসননগরের কিছু এলাকা আগের ফিডার থেকে বাদ দিয়ে দূরবর্তী হাজারীগাঁও-আমবাড়ী ফিডারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এই এলাকার চতুর্দিকে যখন বিদ্যুৎ থাকে তখনও এই মহল্লায় বিদ্যুৎ থাকে না। অথচ. এ মহল্লায় দুটি বড় স্কুল, একটি কিন্টাররগার্টেন এবং বড় একটি ক্লিনিক রয়েছে। এই বিষয়গুলো চিন্তায় রেখে ফিডার নির্ধারণ করা উচিৎ ছিল। আমি মনে করি এটি মোটেও ঠিক হয়নি।’ আরেক বাসিন্দা বলেন,‘কয়েকটি বিদ্যালয়, একটি বড় ক্লিনিকসহ মধ্যশহরের ৪০০ গ্রাহক ঘন ঘন লোডশেডিং এবং সামান্য বৃষ্টি হলেই ভোগান্তির শিকার হবে এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’ জেলার শাল্লা উপজেলার গণমাধ্যমকর্মী পিসি দাস বলেন, ‘গত ৩০ এপ্রিল থেকে ৭ মে রোববার পর্যন্ত ৮ দিনে মোট ২৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাইনি আমরা।’
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের জিএম সোহেল পারভেজ বলেন,‘৩০ এপ্রিল রাতের তা-বের পর গত এক সপ্তাহ কাজ করে আমাদের ১ লাখ ৪৪ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছিলাম। শনিবার রাতের তান্ডবে আবার আমরা বিপদে পড়েছি। অনেক স্থানে আমাদের লাইন পড়ে গেছে। ছাতক-সুনামগঞ্জের ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের ৬ টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। কখন আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারবো জানি না।’
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে গাছপালা উপড়ে পড়ে ও ভেঙে ৩৩ কেভি লাইনের ১০টি ও ১১ কেভি লাইনসহ আবাসিক এলাকার আরো ৩০টি খুঁিটসহ মোট ৪০টি খুঁটি গত ৩০ এপ্রিল ভেঙে পড়েছিল। এগুলো মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ সকল এলাকায় স্বাভাবিক করার আগেই আরেকবার শনিবার রাতে বিপর্যয় হয়েছে। ছাতক-সুনামগঞ্জের মনবেগে ৩৩ কেভি লাইনে এবং কাইতকোনায় আরও একটি খুঁটি হেলে পড়েছে। রোববার ভোর থেকে ছাতক-সুনামগঞ্জ লাইনসহ অভ্যন্তরীণ লাইনে কাজ করছি আমরা। শহরের কিছু এলাকায় আজ রোববার বিকালের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হবে।’ তিনি জানান, সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরের কিছু অংশ ৬ মাস আগেই নতুনপাড়ার লাইন থেকে কেটে আমবাড়ি-হাজারীগাঁওয়ের ফিডারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এই ঝড়ের মৌসুমে করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুতের জিএম সোহেল পারভেজ বলেন, ‘শহরের ইকবাল নগরের কাছাকাছি নির্মিতব্য বিদ্যুৎ সাবস্টেশন না হওয়া পর্যন্ত জেলাবাসীর ভোগান্তি কমবে না।’ তিনি জানান, ঐ সাবস্টেশনটির জুনের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা। কিন্তু কাজের গতিতে মনে হচ্ছে অক্টোবর-নভেম্বরের আগে এর কাজ শেষ হবে না।’