‘বিপাকে’ আরিফ, ‘ভরসা’ মোমেন!
সিলেটঃঃ আবুল মাল আব্দুল মুহিত যখন সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রথম মেয়াদে সিলেট সিটির মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। মুহিত সাংসদ ও অর্থমন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আরিফ মেয়র হন। আরিফের মাথায় ছিল মুহিতের ‘স্নেহের ছায়া’। সিলেট নগরীর উন্নয়নে আরিফকে দিয়ে কাজ করাতে আগ্রহের কমতি ছিল না মুহিতের। নিজে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টিও সহজ ছিল। ফলে তাঁর সময়ে উন্নয়ন কাজের জন্য আরিফ মোটা অঙ্কের বরাদ্দই পান। মুহিতের সময়েই সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রায় ২৩৭ কোটি টাকার বরাদ্দও পান আরিফ। মুহিতের সহযোগিতায় নগরীর উন্নয়নে দৃশ্যমান নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। ফলে প্রতিকূল পরিবেশেও আরিফের জন্য টানা দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়া সম্ভব হয়।গেল ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তাঁর পরিবর্তে ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন সিলেট-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। পরে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। ওই নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে এখনও পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ বলছে, আরিফের প্রতি ড. মোমেনেরও সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
এদিকে, সরকারের গত মেয়াদে অর্থমন্ত্রী ছিলেন সিলেটের আবুল মাল আব্দুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন সুনামগঞ্জের এম এ মান্নান। অর্থাৎ, অর্থ মন্ত্রণালয় ছিল সিলেটিদের ‘দখলে’। কিন্তু এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে মুহিতও নেই, মান্নান স্থান পেয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে। এর ফলে আগে যেভাবে অর্থ বরাদ্দ পেতেন আরিফ, এবার আর তা হচ্ছে না। এমনকি মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকাকালে যেসব অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন, বর্তমানে সেই মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড়াতেও বেগ পেতে হচ্ছে আরিফকে। এর ফলে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ নিয়ে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছেন আরিফ। এছাড়া প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় ওয়ার্ড পর্যায়ে উন্নয়ন কাজের জন্য কাউন্সিলরদেরকে চাহিদামাফিক অর্থ দিতে পারছেন না মেয়র। এরকম অবস্থায় সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ যাতে স্থবির না হয়, পুরনো বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে ছাড় মিলে এবং নতুন করে যাতে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়, সে জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের দ্বারস্থ হয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট সফরে এলে তাঁর বাসায় যান আরিফ। সেখানে সিলেট নগরীর উন্নয়নের বিভিন্ন দিক এবং অর্থ সমস্যার বিষয়টি মন্ত্রীকে অবহিত করেন মেয়র। সব শুনে এসব বিষয় নিয়ে বড় পরিসরে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন মোমেন। এরই প্রেক্ষিতে কাল শুক্রবার সিলেট নগর ভবনে সিটি করপোরেশন (সিসিক) মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন কাউন্সিলর। তারা বলেন, ‘মেয়র নিজে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করাচ্ছেন। কিন্তু তার কাছে ওয়ার্ডের জন্য টাকা চাইতে গেলে বলেন ফান্ড নেই। এতে আমরা ওয়ার্ডে মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে পারছি না।’ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন। কাউন্সিলরদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিগত দিনে আবুল মাল আব্দুল মুহিত অর্থমন্তীর দায়িত্ব পালনকালে যেসব বরাদ্দ সিলেট সিটি করপোরেশনকে দিয়েছিলেন, এখন শুধুমাত্র সেই বরাদ্দের কাজই চলমান আছে। আমরা নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর সিলেট সিটি করপোরেশনকে কোন বরাদ্দ দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। আর পূর্বের বরাদ্দগুলোর টাকা ছাড়াতেও অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। এজন্য অর্থের অভাবে সিলেটের বিভিন্ন চিহ্নিত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান মেয়র। সব শুনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হলাম। আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।’ অর্থের জন্য প্রয়োজনে মেয়রকে সাথে নিয়ে অর্থমন্ত্রী এবং পরিকল্পনামন্ত্রীর সাথে দেখা করার আশ্বাসও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়র আরিফ যেভাবে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিতের আস্থাভাজন হয়ে তার ওপর ভরসা করে সিলেট নগরীর উন্নয়ন কাজ করেছিলেন, বর্তমানে আরিফের সেই ভরসার স্থান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। আর আরিফের ইতিবাচক কর্মকা-ের প্রতি মোমেনেরও সুদৃষ্টি রয়েছে। দুজনের এই সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে মূলত সিলেট মহানগরীরই উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।