বিলকিস নূরের দীর্ঘশ্বাসে রতনের ভাগ্য বদল
শাহজালাল আইসিটি বিডি লিমিটেডের মাধ্যমে শুরু হয় সিলেটের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের কাজ। প্রথমে টাওয়ার বসানো হয় জগন্নাথপুরেই। একে একে বসে ৬টি টাওয়ার। একেকটি টাওয়ার বসাতে খরচ হয় ১০ লাখ টাকা করে। ব্যবসা তখন কেবলই প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছে। তাই ধারদেনা করেই খরচ যোগানো হচ্ছিলো। বিলকিস নূর বললেন, তারা কষ্ট করে অর্থের যোগান দিচ্ছিলেন কিন্তু লাভ হচ্ছিলো শুধু মোয়াজ্জেম হোসেন রতনেরই। নিজেকে বাংলাদেশের আইসিটি ক্ষেত্রে প্রথম নারী উদ্যোক্তা দাবি করে বিলকিস নূর বলেন, প্রতিষ্ঠানটি তখন আমার কাছে একটি স্বপ্নের মতো হয়ে গিয়েছিলো। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেওয়াটাকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন তাই লাভ না হলেও আর পিছু হটতে পারেননি। কিন্তু রতন বিষয়টি নিজের আখের গোছানোর পথ হিসেবেই নিয়েছিলেন।
এক সন্ধ্যায় বিলকিস নূর যখন তার অফিসে যান শুনতে পান ভেতরে বেশ হইচই। কিছু একটা যে ঘটতে যাচ্ছে তা আগে থেকে আঁচ করেছিলেন তিনি। হইচইয়ের বিষয়টি তার কাছে ভালো মনে হয়নি। তিনি কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে খবর পাঠান তখনকার স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিনের কাছে। মিসবাহ উদ্দিন অফিসে উপস্থিত হয়ে মুখোমুখি হন মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের। রতন তখন নিজেকে প্রতিষ্ঠানটি বুঝিয়ে দিতে বলেন। রতনের এক সঙ্গী- বিলকিস নূর যাকে বলছেন ছাত্র শিবিরের ক্যাডার, তিনি মিসবাহ উদ্দিনকে ফোন ধরিয়ে বিএনপি নেতা সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর সাথে কথা বলতে বলেন। মিসবাহ উদ্দিন রাজি হননি, তিনি নিজেই বিষয়টি সামলানোর দায়িত্ব নেন। ডেকে আনান এলাকার আরো কিছু লোকজনকে। তারা এসে কথাবার্তা বলেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের সাথে। কিন্তু রতন ও তার লোকজন কিছুই মানতে রাজি হননি। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে বেঁধে ফেলা হয়। লিমিটেড কোম্পানির এমডি হওয়ায় রতনের বিরুদ্ধে কোনো পুলিশি অ্যাকশনে যাননি বিলকিস নূর। বিলকিস নূর নিজেদের সব উপার্জন খুইয়ে ফেলায় কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সিদ্ধান্ত হয় রতন কোম্পানিটি দেখাশোনা করবেন। দুমাস পরে রতন জানালেন কোম্পানিটি তিনি পরিচালনা করবেন না। বাধ্য হয়ে বিলকিস নূর একাই কোম্পানিটির দায়িত্ব কাঁধে নেন। কোম্পানির অবস্থা বুঝতে অডিট করান বিলকিস নূর। ধরা পড়ে বিশাল অনিয়মের। দুই কোটি টাকা দেনা কাঁধে চাপে বিলকিস নূরের। বাসা বাড়ি বিক্রি করে আস্তে আস্তে সে দেনা শোধ করেন তিনি। সিলেট নগরীর কলাপাড়ায় তার চারতলা বাসা ছিলো সেটিও বিক্রি করতে হয়। বিলকিস এখন নূর এখন থাকেন নগরীর শাহজালাল উপশহরের তার ভাইয়ের দেওয়া একটি ফ্ল্যাটে। বিলকিস নূর তার আত্মসাতকৃত অর্থ উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।