বিশুদ্ধ পানির সংকটে হাওরের মানুষ
জগন্নাথপুর সংবাদদাতা:: জগন্নাথপুরে হাওরপাড়ের মানুষের কাঁচা বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর সেই ফসলের পচন থেকে তৈরী এ্যামোনিয়া গ্যাসে একে একে মাছ ও হাস মারা যাওয়া বিপাকে ঐই এলাকার মানুষ। ধান, মাছ ও হাস হারিয়ে এখন দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ধানগাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। পানিতে দুর্গন্ধ থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় কাজেও এখন হাওরের পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
রোববার নলুয়ার হাওরের তীরবর্তী হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ফসলডুবির পর গত ১৬ এপ্রিল হাওরের ধান পচে বিষাক্ত এ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে হাওরের মাছ মরে পানিতে ভেসে উঠে। ধান গাছ পচে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। দূষিত হয়ে যায় হাওরসহ নদ,নদী, খাল ও বিলের পানি। বিষাক্ত পানি পান করে হাঁসে মড়ক দেখা দিচ্ছে বলেও তারা জানান। আর এই মুহূর্তে এই দুর্যোগকালিন মাছ ও হাস পচে হাওরবাসীর বিশুদ্ধ পানি সংকট তৈরী হয়েছে। নলুয়া হাওরপাড়ের বাসিন্দা উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের ভুরাখালি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাসিম জানান, ফসলডুবির পর কৃষকদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল হয়ে উঠে হাওরের মাছ। ধান পচে পানি বিষাক্ত হয়ে বিষক্রিয়ায় মাছও মরেছে। ধানগাছ পচে হাওরের পানি দূষিত হওয়ায় খাওয়ার পানি আমাদের জন্য দুরূহ হয়ে উঠেছে।
একই গ্রামের কৃষক আসমান উল্লাহ জানান, হাওরের অধিকাংশ মানুষ খাওয়া পানি, গোসল করাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে হাওরের পানি ব্যবহার করেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। দূষিত পানিতে অনেকেই গোসল করছেন। আবার কেউ কেউ হাওরের পানিতে গোসল করছেন না। গ্রামের দূরবর্তী একটি বাড়ি থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছি। কৃষক আসলাম উল্লাহ জানান, পরপর তিন বছর ধরে ফসল পাইনি। খুবই অভাবের মধ্যে আছি। ধার কর্জ করে সংসার কোন মতে চালাচ্ছি। দুঃখ, কষ্ট আমাদের পিছু ছাড়ছেই না। আল্লাহপাকই জানেন কবে কষ্ট শেষ হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা হাওর উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দেকুর রহমান জানান, হাওরপাড়ের মানুষের শুধুই দুঃসংবাদ শোনা যাচ্ছে। ধান পচে পানি দূষিত হওয়ার পর এখনো বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও হাওরের দূষিত পানি খেয়ে গৃহপালিত হাঁস মোরগে মড়ক দেখা দিচ্ছে বলে খবর পাচ্ছি। জগন্নাথপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রব সরকার জানান, হাওরাঞ্চলে এমনিতে টিউবওয়েলের সংকট রয়েছে। তার ওপর ফসলহানির কারণে হাওরের ফসল পচে গেছে। এ কারণে হাওরের পানি কিছুটা দূষিত হয়ে পড়েছে বলে জানান। জগন্নাথপুর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ কামরুল আহমদ খান জগন্নাথপুরের হাওরগুলোতে হাঁসের মড়ক নেই বলে জানিয়েছেন। তবে, বিষক্রিয়ায় একটি খামারের ১৬শ’ হাঁস মারা গেছে বলে তিনি জানান।