আল-হেলাল : নামমাত্র কাজ করে কাবিটা প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বুলবুল এর বিরুদ্ধে।গত ২৬/৯/২০২১ইং তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঐ ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। ১১ অক্টোবর সোমবার দুপুরে প্রকল্পস্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা মেম্বার কামরুজ্জামান বুলবুলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন রণবিদ্যা গ্রামের জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন মাস্টার,মোঃ সোহরাব হোসেন,উসমান আলী,আব্দুর রহমান,মোঃ আমির হোসেন,আব্দুল মালেক,মাতাব মিয়া,সুরুজ আলী,বশির উদ্দিন,জয়নাল আবেদীন,দুলাল মিয়া,আব্দুল কদ্দুছ,বাবর আলী,গেন্দু মিয়া,আরমান মিয়া ও মিজানুর রহমানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। মানববন্দনের পরপরই অভিযোগ দায়েরকারীদের উপর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বুলবুল। তিনি অভিযোগকারীদেরকে গত ২ মাস ধরে তিরস্কৃত ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে যাচ্ছিলেন। এছাড়া দায়েরকৃত অভিযোগটির কোন তদন্ত না হওয়ায় অভিযোগকারীরা জেলা প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় হতাশ হয়ে পড়েন।
অবশেষে এলাকাবাসীর অভিযোগটি আমলে নিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক। তিনি অভিযোগটির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। জানা যায়,২০২০-২১ইং অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) সাধারণ (তৃতীয় পর্যায়) কর্মসুচির আওতায় গৃহীত প্রকল্পের তালিকায় সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের রনবিদ্যা সিবিআরএমপি রাস্তা হতে আছির আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। গ্রামবাসী বলেন, পলাশ ইউনিয়নের রনবিদ্যা সিবিআরএমপি রাস্তা হতে আছির আলীর বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে কর্মসৃজন,কাবিখা ও টিআর কর্মসুচির আওতায়একাধিকবার বরাদ্দ দিয়ে রাস্তাটির কাজ করা হলেও রাস্তাটির নির্মাণ কাজ কখনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে রাস্তাটি সাধারনের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০২১ইং সনের গত জুন মাসে দেখা যাচ্ছে পুরাতন উক্ত রাস্তায় মেম্বার বুলবুল আবারও কাজ করছেন। তখন এলাকাবাসী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল হতে রাস্তাটির কাজ করছেন বলে প্রচার করেন।
পরবর্তীকালে গ্রামবাসী খোজ নিয়ে জানতে পারেন পুরাতন এই রাস্তাটির জন্য আবারও ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্ধ হয়। মেম্বার বুলবুল বরাদ্দকৃত এ টাকা থেকে মাত্র ২৭ হাজার টাকা ব্যয় করে বাকী টাকা পিআইও অফিসের লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা ভাগ ভাটোয়ারা করে নিয়েছেন। অন্যদিকে গ্রামবাসী বারবার রাস্তার জন্য প্রকল্প অনুমোদন পেলেও কোন প্রকল্পের কাজই শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। গ্রামবাসী চ্যালেঞ্জ করে বলেন,মাত্র চারশত টাকা রুজে ৪ জন শ্রমিক দিয়ে মোট ১৭ দিন দায়সারাভাবে কাজ করে ২৭ হাজার দুইশত টাকা ব্যয় করে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত বাকী টাকা পকেটস্থ করেছেন মেম্বার বুলবুল ও পিআইও অফিসের স্টাফরা। এদিকে এলাকাবাসী মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেচো কুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মত রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।
পিআইও অফিসের অফিস সহায়ক (আউটসোর্সিং পিওন) মমিন হোসেন বলেছেন,উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দ হতে পিআইও সাহেব ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। যে কারণে এখনও চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। প্রয়োজনে চুড়ান্ত প্রতিবেদনে ২/৪ হাজার টাকা প্রকল্প চেয়ারম্যানের কাছে ফেরত দেখিয়ে দেবো। অভিযোগ করে কি লাভ হবে। অভিযোগ দায়েরের পূর্বে পিআইসির সভাপতি ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বুলবুল এর সাথে অভিযোগকারীরা যোগাযোগ করলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য প্রকল্পের বাকী কাজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু তার প্রতিশ্রæতির ২ মাস এবং প্রকল্পের মেয়াদের ৪ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত ইউপি সদস্য প্রকল্পের বাকী কাজ সম্পাদন করেননি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান বুলবুল এর মুঠোফোনে কল করলে তিনি নিজেকে ২ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য বলে দাবী করেন। এবং তার কাজের ব্যাপারে জানার জন্য পিআইওর বক্তব্য গ্রহনের দোহাই দিয়ে বলেন,আমি কাজ করেছি বলেই পিআইও সাহেব আমাকে পুরো বিলের টাকা পরিশোধ করেছেন। এখন আর পূর্ব প্রতিশ্রæত বাকী কাজ সম্পাদনের প্রশ্নই আসেনা। এছাড়া প্রকল্পের টাকা আমি একা ভোগ করিনি কোন কিছু হলে এর দায় দায়িত্ব পিআইও এবং মমিন সাহেবকেও নিতে হবে। জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন অফিসার (ডিআরআরও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন,জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আগামী ১লা নভেম্বর সোমবার আমি সরজমিনে গিয়ে অভিযোগের তদন্ত করবো।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২০১ বার