বিয়ানীবাজারে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষঃ ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজারে। এ ঘটনার জের ধরে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। লিটু (২৫) নামের ওই যুবক পৌর এলাকার খাসা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। তিনি ছাত্রলীগের পাভেল মাহমুদ গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বিবদমান পাভেল মাহমুদ গ্রুপ এবং আবুল কাশেম পল্লব গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ক্যাম্পাসে অবস্থান এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় গ্রুপের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এর প্রায় মিনিট দশেক পর কলেজের ইংরেজি বিভাগের ১২০ নম্বর কক্ষে একটি গুলির শব্দ শোনা যায়। তখন পাভেল গ্রুপের বেশ ক’জন কর্মী এবং পুলিশ এগিয়ে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের মেঝেতে লিটুর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে তাকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাভেল মাহমুদ সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক এবং আবুল কাশেম পল্লব উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। নিহত লিটু পৌরশহরের নয়াগ্রাম রোডে মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতো বলে জানান তার আত্মীয় রুমেল আহমদ।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জকিগঞ্জ সার্কেল) মোস্তাক সরকার জানান-‘লিটু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে, এটা নিশ্চিত। তবে কে বা কারা তাকে গুলি করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’ তিনি জানান-‘লিটু নিহতের ঘটনায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এবং খোসার সন্ধান করছি। এলক্ষে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।’
বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বলেন,-‘নিহত লিটু তাঁর কলেজের ছাত্র নয়, সে বহিরাগত। কোনো গ্রুপের পক্ষে মিছিল করতে হয়তো সে ক্যাম্পাসে অনধিকার প্রবেশ করে।’ তিনি বলেন- ‘কলেজে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পরও সে কিভাবে এখানে প্রবেশ করে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ সংক্রান্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২২শে জুলাই পর্যন্ত কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা এবং পাঠদান বাতিল করা হয়েছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা যথারীতি চলবে।’
এদিকে পাভেল মাহমুদ জানান- সকালে সৃষ্ট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সমাধানের পরও কে বা কারা লিটুকে মেরেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি লিটুকে তার গ্রুপের কর্মী বলে জানান। অপরদিকে আবুল কাশেম পল্লবের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ গ্রুপের নেতা অজিৎ আচার্য বলেন- ‘কলেজে সংঘর্ষের খবর পেয়েছি। তবে লিটুকে কারা মেরেছে তা কেউ বলতে পারেনি।’
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান-‘এ ঘটনায় অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। আমরা মূলত আগ্নেয়াস্ত্রের সন্ধান করছি। এটা পাওয়া গেলে অনেক বিষয় খোলাসা হবে।’
এদিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় লিটু নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে প্রশাসনের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ মোট ৬টি গ্রুপে দীর্ঘদিন থেকে বিভক্ত। এরা নিজেদের মধ্যে প্রায় প্রতিমাসেই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গত ছয়মাসে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে অন্তত ২০ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এসব সংঘর্ষে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের উপজেলায় ছাত্রলীগের কমিটি নেই বহু বছর থেকে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন প্রায় দু’মাস আগে এখানে কর্মিসভা করে কমিটি করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে উদ্যোগ চোখে পড়েনি।