বিয়ে না করেই তারা অবৈধভাবে স্বামী-স্ত্রী!
রোশনার আচরণও এ সময় ছিল স্বাভাবিক। গ্রামের শত শত মানুষ ওই রাতেই নৌকা দিয়ে আব্দুস সালাম ও রুলি বেগমের সন্ধানে ‘টাইয়া পাগলা’ হাওরে তল্লাশি শুরু করে। দুজনের লাশের জন্য গ্রামের মানুষ অস্থির থাকলেও রোশনা ও তার প্রেমিক বেশ স্বাভাবিক। বরং রোশনা এ ঘটনার জন্য তার ভাসুরদের দোষারূপ করে তাদের ফাসানোর চেষ্টা চালায়। এদিকে কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনা নিয়ে গতকাল আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করেছে সিলেটের পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।
সিলেট পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল করিম মল্লিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, পিবিআই আলোচিত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে। তিনি বলেন, ঘটনার তদন্ত পিবিআইয়ের হাতে পৌঁছার পর মামলাটি প্রথমে পর্যালোচনা করা হয়। পরে শুরু হয় অনুসন্ধান। পিবিআই প্রথম থেকেই সন্দেহের চোখে দেখছিল রোশনা বেগমকে। কিন্তু পিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হতে না হতেই মখন ও রোশনা গা ঢাকা দেয়। এতে সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। পরে খুনের ঘটনায় জড়িত গনু মিয়া ও ইলিয়াস মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। তিনি বলেন, পিবিআই সব কিছু জানার পর রোশনা ও তার কথিত স্বামী মখনকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে। পরে গ্রেপ্তারের পরপরই রোশনা খুনের ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জনাবন্দি দিয়েছে।
তিনি বলেন, রোশনার প্রেমিক মখন ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন মাথায় আঘাত দিয়েই রুলি ও তার বাবাকে খুন করেছে। আর খুনের ঘটনার পর লাশ ফেলে দেয়া হয় টাইয়া পাগলা হাওরে। পরদিন স্থানীয় লোকজন হাওর থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ সুপার জানান, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে চারজন। এর মধ্যে দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে পিবিআই দ্রুত আদালতে চার্জশিট দাখিল করবে বলে জানান তিনি। চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতিও চলছে বলে জানান।
পিবিআই জানায়, খুনের ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে রোশনা ও মখনের ‘পরকীয়া’। মখনের সঙ্গে পুটামারা গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রীর দীর্ঘ দিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে মখনের সঙ্গে রোশনাকে নিজেদের বাড়িতেই অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পায় মেয়ে রুলি বেগম। রুলি মায়ের এ আচরণেরও প্রতিবাদ জানায়। সবাইকে জানিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়। এ কারণে পরিকল্পনা মতো মেয়ে রুলি ও স্বামী আব্দুস সালামকে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে নৌকাযোগে গিয়েছিল রোশনা বেগম। রাত ৯টায় হাওরের মধ্যখানে রোশনার প্রেমিক মখন তার দলবল নিয়ে দুটি নৌকা যোগে হামলায় চালায়। তারা প্রথমে অষ্টাদশী রুলি বেগমকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় রোশনা বেগম বাধা না দিলেও পিতা হিসেবে আব্দুস সালাম এগিয়ে এলে তার মাথায় বৈঠা দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে আব্দুস সালাম পানিতে তলিয়ে যায়। পরে রুলির মাথায়ও বৈঠা দিয়ে আঘাত করা হয়। রুলিও হাওরের পানিতে তলিয়ে যায়। ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে রোশনা। আর দেরিতে বাড়ি ফেরার কারণ হিসেবে তিনি স্বজনদের জানিয়েছিলেন- তার মাথায়ও আঘাত করা হয়েছে। এতে তিনি অজ্ঞান হয়ে নৌকায় পড়ে যান। এরপর জ্ঞান ফিরে এলে বাড়ি চলে আসেন। পিবিআই জানায়, পুরো ঘটনাটি ছিল রোশনা ও মখনের সাজানো। হামলার সময় মখনের সঙ্গে সহায়তা করেছে রোশনা নিজেই। গ্রেপ্তারের পর সে নিজেও এসব কথা স্বীকার করেছে।-মানবজমিন