বৌলাই ও যাদুকাটা নদীর ৪৩ কোটি টাকার খনন কাজ নিয়ে শুরুতেই অভিযোগ
তাহিরপুরের পাহাড়ী নদী আপার বৌলাই ও যাদুকাটা প্রায় ৪৩ কোটি ব্যয়ে খননের কার্যাদেশ গত পহেলা জুলাই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে। আপার বৌলাইয়ের ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে ঢাকার এএডিএল-এন্ড জেডকেজিবি। এই কাজে বরাদ্দ ৩০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং যাদুকাটায় ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে ঢাকার ওরিয়েন্টাল ট্রেডিং এ- বিল্ডার্স লি.। এই কাজে বরাদ্দ ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। পাহাড়ী ঢল থেকে হাওরের ফসল রক্ষার জন্য এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকরা বলেছেন,‘কাজের শুরুতেই স্থানে স্থানে সকল তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। অর্ধেক কাজ অর্ধেক চুরি নীতি শুরুতেই বন্ধ করতে হবে।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য বলেছেন,‘যাদুকাটা নদী খনন করে সরকারের বড় অংকের অর্থের অপচয় ঘটানো হচ্ছে, খননের পর নদী সঙ্গে সঙ্গেই ভরাট হবে, মানুষের কোন কাজে আসবে না।’
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ এবং ধর্মপাশার শনিরহাওর, মাটিয়ান হাওর, ধানকুনিয়া, আঙ্গারুলি হাওরসহ ছোট বড় হাওরগুলোর ফসল পাহাড়ী ঢলের আঘাত থেকে রক্ষা করতে জামালগঞ্জের সুরমা নদী থেকে উজানে ১৬ কিলোমিটার বৌলাই নদী খননের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। গত পহেলা জুলাই খনন কার্যক্রমের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। একই দিনে রক্তি নদী থেকে যাদুকাটা নদীর উজানে ৬ দশমিক ১২৫ কিলোমিটার খনন করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন মনে করেন বৌলাই ও যাদুকাটা নদী খনন করে এমন উচ্চতায় মাটি ফেলতে হবে যাতে হাওরের আফর বাঁধ হয়। গ্রাম, বাজার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। একই সঙ্গে মানুষের আয়ের কিছু স্থাপনা গড়ে ওঠে সেটিও চিন্তা করা যেতে পারে। মাটি ঠিক রাখার জন্য চারপাশে জিও টেক্সটাইল দিতে হবে।
সিপিবি’র সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার বলেন,‘নদী খননে যাতে দুর্নীতি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনে বিশেষ বাহিনীকে যুক্ত করা যেতে পারে। স্থানীয় লোকজনকে সকল তথ্য আগে জানিয়ে দিতে হবে। তথ্যের সাইনবোর্ড বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক কাজ অর্ধেক চুরি-এটি আগেই বন্ধ করতে হবে। শুনেছি নদী খননের কাজে নানা ধরনের অনিয়ম হয়। এগুলো ঠেকাতে হবে। বার বার বরাদ্দ পাওয়া যাবে না।’
সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা’র) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা নজির হোসেন বলেন,‘জেলা প্রশাসককে প্রধান করে নদী ও হাওর পাড়ের জমির মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করতে হবে। নদী খনন কাজ চলাকালীন সময় ঘন ঘন মতবিনিময় করতে হবে। নদী থেকে কী পরিমাণ মাটি ওঠানো হবে, সেই তথ্য সকলকে জানাতে হবে। নদীর পাড়ের উঁচু মাটি আফর বাঁধ হিসাবে যাতে কাজে লাগে, সেভাবে ফেলতে হবে। উঁচু বাঁধে হাঁসের খামারসহ নানা ধরনের খামার গড়ে তোলা যেতে পারে।’
বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘দুটি নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে, এর মধ্যে যাদুকাটা খননে এলাকার মানুষের কোন লাভ হবে না। লাভ হবে ঠিকাদার ও পাউবো’র কিছু কর্মকর্তার। এই নদী আগের দিন খনন করলে, পরের দিন আবার সেই স্থান ভরাট হয়ে যাবে। যাদুকাটা খনন না করে পাটলাই নদী খনন করলে সীমান্তের শুল্কবন্দরগুলো উপকৃত হতো। এছাড়া আমি মনে করি নদী খননের কাজ শুরু করা প্রয়োজন উজান থেকে, নিচের দিকে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই খনন করতে হবে। তারা (পাউবো) করছে ভাটি থেকে, তাতে কোন ফল হবে বলে মনে করছি না। নদী খননের শুরুতেই স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষে সরকারি-বেসরকারি মনিটরিং কমিটি থাকা জরুরি। এটি যাতে হাওর রক্ষা বাঁধের মতো দুর্নীতির উৎস হিসাবে তৈরি না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, এর আগেও জামালগঞ্জের ভাটিতে নদী খননের নামে তেল চুরির মহোৎসব হয়েছে। কিন্তু নদীর নাব্যতা আসেনি। এভাবে খ- খ- করে দুটি- তিনটি নদীতে কাজ করে ফল পাওয়া যাবে না, যেটি খনন শুরু হবে, যেটুকু প্রয়োজন সবটুকুই খনন করতে হবে।’
পাউবো’র সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া বলেন,‘নদী খননের আগে টাস্কফোর্স ও আইডব্লিউএম যৌথভাবে প্রিওয়ার্ক নেবে। জমির মালিক, পাউবো ও ঠিকাদার যৌথভাবে মাটি ফেলার স্থান বাছাই করবেন। মাটি যেখানে ফেলা হবে চার পাশে বাঁধ দেওয়া হবে। মাটি এমনভাবে উঁচু করে ফেলা হবে যাতে মানুষের বসতভিটা, বাজার, কিংবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়। যাদুকাটা খনন প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত। স্টাডি করেই এটি গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ডিপিপি অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’