ব্যবসায়ী হত্যায় ফেঁসে যাচ্ছেন কবি শাহাবুদ্দীন নাগরী
উৎপল দাস।।
রাজধানীর এ্যালিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক কাস্টমস কমিশনার এবং বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক একেএম শাহাবুদ্দীন নাগরী। হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসাতেই উপস্থিত ছিলেন তিনি। ঘটনার কয়েক মিনিট পরে দ্রুততার সঙ্গে ওই বাসা ত্যাগ করেন তিনি। এসব দৃশ্য ধরা পরেছে অ্যালিফ্যান্ট রোডের ১৭০/১৭১ নম্বর ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়। ঘটনার পরপরই ক্যামেরার ওইসব ফুটেজ জব্দ করে পুলিশ। তাছাড়াও নিহত নূরুল ইসলামের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমীও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো।
নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, ঘটনার আগে প্রায় প্রতিদিনই ওই বাড়িতে আসা যাওয়া করতেন শাহবুদ্দীন নাগরি। এমনকি ঘটনার দিনও তিনি ওই বাসাতেই ছিলেন। হত্যাকাণ্ড শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি দ্রুততার সাথে ওই বাসা ত্যাগ করেন। প্রথম দিনের জিজ্ঞাসাবাদেও নাগরি এসব তথ্যের সত্যতা শিকার করেছেন। তবে এখনো তিনি ওই হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি বলেও জানান তিনি।
গত ১৩ই এপ্রিল রাতে অ্যালিফ্যান্ট রোডে ডমইনো অ্যাপার্টমেন্টের নিজ ফ্ল্যাটে নুরুল ইসলাম নামে ওই ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের বোন শাহানা রহমান কাজল নিউ মার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ওই দিন রাতের কোনো এক সময় নুরানী আক্তার সুমী, শাহাবুদ্দীন নাগরীসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুই-তিনজন মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে নূরুল ইসলামকে হত্যা করেছে। এরপরপরই ওই বাসা থেকে নিহতের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমী এবং তার গাড়ী চালক সেলিমকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির) ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠায়।
সূত্র জানায়, নূরুল ইসলাম নিউ মার্কেট এলাকায় খাবারের ব্যবসা করতেন। পাঁচ-ছয় বছর আগে নূরানীর সঙ্গে প্রেম ও পরে তারা বিয়ে করেন। নূরানীর এক বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় ছিল সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা শাহাবুদ্দীন নাগরীর। তার মাধ্যমেই বেশ কিছুদিন আগে সুমীর সঙ্গে পরিচয় হয় নাগরীর। একপর্যায়ে তারা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তখন থেকেই নাগরী ওই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এর ধারাবাহিকতায় শাহাবুদ্দীন নাগরীর গাড়িচালক ও অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ ধারণা করে যে এ ঘটনার সঙ্গে নাগরী জড়িত থাকতে পারেন। এর পরই পুলিশ নূরানীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নূরানী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে তার সঙ্গে নাগরীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার ঝগড়া চলছিল। আর তা থেকেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের ধারণা। এছাড়াও নূরানীর ওই বান্ধবীকেও গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ, যার সহায়তার নাগরির সঙ্গে নূরানীর পরিচয় হয়।
ওই মামলার বাদী নিহতের বোন কাজল বলেন, নূরানীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কম ছিল। নূরানী ভাইকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে দিত না। উগ্রভাবে চলাফেরা করত। বিয়ের সময়ও আমরা আসিনি। বিয়ের পর মাত্র এক দিন দেখা হয়েছিল ভাবির সঙ্গে। তিনি আরো বলেন, ভাই নিহত হয়েছে- এ খবর পেয়েই আমরা ঢাকায় চলে আসি। তারপর আসে পাশের বাসার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি যে এই বাসায় নাগরি নামের একজন মানুষ আসতেন, যার সাথে নূরানী ভাবীর গভীর সম্পর্ক। পরে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনিও জড়িত।
নূরুল ইসলামের বাবার নাম আতিয়ার রহমান। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তিনি বাদে পরিবারের সব সদস্যই খুলনায় থাকেন। পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনে এই দম্পতির ঘরে সন্তান আসেনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রহমান বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে একেএম শাহবুদ্দীন নগরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক কিছু প্রমাণও আমরা পেয়ে গিয়েছি। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি। এর আগে, গত ১৭ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচনের জন্য নাগরী, নিহতের স্ত্রী নূরানী এবং তার গাড়ী চালক সেলিমকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করে দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুনি খান চৌধুরী তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এখনো তাদের রিমান্ড চলছে।