ব্যান্ডসঙ্গীতে ভাঙনের ঢেউ
বিনোদন ডেস্ক:: এ বছরটি বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের জন্য অস্থির সময়। বেশ কিছু ব্যান্ডে ভাঙনের খবর এবছরই সামনে এসেছে। আবার কেউ কেউ ব্যান্ড ভাঙার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছেন। ভাঙার মধ্য দিয়েই নতুন ধারায় পথচলা শুরু করবে দেশের ব্যান্ডসঙ্গীত এমনটাও মনে করছেন কেউ কেউ।
মাইলসে ভাঙন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে মাইলস। ১৯৭৯ সালে শুরু হয় দলটির যাত্রা। এবার মাইলসের মালিকানা শাফিন আহমেদের নিজস্ব দাবি করে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন শাফিন। নোটিসে কাউকে অভিযুক্ত করা না হলেও মাইলস নাম ব্যবহার করে কেউ যেন গান করতে না পারেন তার জন্য ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন মোতাবেক মাইলস ব্যান্ডের মালিকানা নিজের নামে করে নিয়েছেন শাফিন। তিনি দাবি করেন, মাইলস ব্যান্ড এখন ‘মাইলস ব্যান্ড লিমিটেড’- এর সম্পত্তি। যার একক অধিকার শুধু শাফিন আহমেদের। গত ১৫ নভেম্বর কোম্পানি আইনে নিবন্ধিত হয় মাইলস। অন্যদিকে ব্যান্ডের অপর চার সদস্য শাফিনের সঙ্গে আর গান করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। মাইলস শাফিন আহমেদের একার নই বলেও দাবি করেছেন তারা। মাইলসের দ্বন্দ্বের বিষয়টি শুরু হয় এ বছরের এপ্রিলে। শাফিনকে ছাড়া গত কয়েক মাসে একাধিক কনসার্টে অংশ নিয়েছে মাইলস।
তানযীর তুহীন ও শিরোনামহীন
গত ৬ অক্টোবর শিরোনামহীন ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিস্ট তানযীর তুহীন ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যান্ড থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর শেখ ইশতিয়াক নামের নতুন একজনকে নিয়ে শিরোনামহীন নতুন লাইন আপ সাজায়। শিরোনামহীনের জনপ্রিয় গানগুলো কারো ব্যক্তিগত নয় বলে মন্তব্য করেন ব্যান্ডের অপর সদস্য জিয়া। তিনি বলেন, শিরোনামহীনের গান যদি কেউ নিজের গান বলে প্রচার করে কিংবা কনসার্টে গায়, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। তানযীর তুহীন দল ছাড়ার পর শিরোনামহীনের বর্তমান লাইনআপে রয়েছেন জিয়াউর রহমান (বেজ গিটার), কাজী আহমাদ সাফিন (ড্রামস), দিয়াত খান (লিড গিটার), রাসেল কবীর (কি-বোর্ড), শেইখ ইশতিয়াক (ভোকাল)।
তুহীনের নতুন ঠিকানা ‘আভাস’
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ‘আভাস’ নামের নতুন ব্যান্ড করার ঘোষণা দেন তানযীর তুহীন। নতুন এই ব্যান্ডের লাইনআপে আছেন- লিড-সুমন, বেস-রাজু, ড্রামস-রিঙ্কু, কি-বোর্ডস-শাওন, ভোকাল-তুহীন। আগামী জানুয়ারিতে নতুন গান প্রকাশ করবে ‘আভাস’। ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত কনসার্ট করবে। ‘আভাস’ ব্যান্ডের পাঁচ সদস্যের তিনজনই ব্যান্ড অবসকিওরের সঙ্গে যুক্ত। তারা হলেন- রাজু, রিঙ্কু, শাওন।
অবসকিওরে ভাঙন
অবসকিওর ব্যান্ডের তিন সদস্যের ‘আভাস’-এ যোগ দেয়ার বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি এই ব্যান্ডের প্রধান ও কণ্ঠশিল্পী সাঈদ হাসান টিপু। তিনি বলেন, ‘ওরা ভেবেছিল অবসকিওরে বাজাবে আবার অন্য ব্যান্ডে গিয়ে খ্যাপ মারবে। দুই ব্যান্ড থেকেই রোজগার হবে। কিন্তু আমার ব্যান্ডের কিছু নিয়ম আছে, নীতি আছে। তাদের সঙ্গে আমার কোনো মনোমালিন্য নেই। গানের চেয়ে আয়ের দিকটাই তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। তাদের প্রতি আমার শুভ কামনা রইল। এরই মধ্যে অবসকিওর ব্যান্ডে কি-বোর্ডে যোগ দিয়েছেন বিনোদ আর বেস গিটারে ফয়সাল। শিগগিরই নতুন ড্রামার যুক্ত হচ্ছেন।
ওয়ারফেইজ ছাড়লেন কমল
১৯৮৪ সাল থেকে ব্যান্ড ওয়ারফেইজের গিটার কাঁধে নিয়ে মঞ্চ মাতিয়েছেন ইব্রাহিম আহমেদ কমল। গত ২০ ডিসেম্বর কমল তার ফেসবুক ফ্যান পেজে এক স্ট্যাটাসে বলেন, যারা হেভি মেটাল গান করেন তাদের এক্সট্রিম শারীরিক ফিটনেস দরকার হয়। অ্যাথলেটরা ইনজুরিতে পড়লে যেমন তাদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিতে হয়, হেভি মেটালে যারা গান করেন তাদের অবস্থা একই রকম। ২০১০ সালে আমি গুরুতর ইনজুরিতে আক্রান্ত হই। যা এখনো আছে। চিকিৎসকরা আমাকে পুরো বিশ্রামে থাকতে বলেছেন।
জলের গানে নেই কনক
দেশের ভিন্ন ধারার গানের দল জলের গান। এই দলের অন্যতম ভোকালিস্ট কনক আদিত্য বেশ কিছুদিন ধরেই দলটির সঙ্গে গান করছেন না। ফেসবুক স্ট্যাটাসে জলের গান ছাড়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, নতুনদের মাঝে জলের গান বেঁচে থাকবে। একদিন হয়তো আমি, রাহুল দর্শক সারিতে বসে দেখবো জলের গানের নতুন সদস্যরা দর্শকের সামনে গান করছে। আমরা কখনোই চাইনি প্রচলিত ধারার ব্যান্ডের মতো হবে জলের গান। নির্দিষ্ট কিছু শিল্পীই সেখানে গাইবেন। চেয়েছি, এর চেয়ে বড় কিছু হব আমরা। পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারলে জায়গা ধরে রাখার কোনো মানে নেই। আমরা যে যেখানেই থাকি, জলের গান নিজের মতোই চলবে।