ব্রাহ্মণবাড়িয়া  : ফেসবুক-ই তার দিনমান। ক্ষণে ক্ষণে স্ট্যাটাস আর ছবি পোস্ট ২৪ ঘণ্টার কাজ। নিজের হাত-পা ব্যথার খবর জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েও আলোচিত হয়েছেন। সঙ্গে দিয়েছেন নিজের সেসব অঙ্গের অনাবৃত ছবি। সর্বক্ষণ ফেসবুকে বিচরণের কারণে এখন ফেসবুক নেত্রী হিসেবেই জানে তাকে সবাই। নেতা-নেত্রী, সাংবাদিক ফেসবুকে সবাই তার কটাক্ষের, খারাপ মন্তব্যের শিকার। বাদ যাননি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। ফারহানা মিলি (৩০) নামের এই তরুণী ফের আলোচনায় এসেছেন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলার আসামি হয়ে। ফেসবুকে যুব মহিলালীগ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করায় এবার তার বিরুদ্ধে হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা। এর আগেও একই আইনের মামলার আসামি হয়েছিলেন মিলি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত এক হাজার টাকার নোট আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে ফেসবুকে নিজের আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন। তারপরও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের একতরফা সম্মেলনে তাকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক বানানো হয়েছে। মিলি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট হরন গ্রামের মো. ইসমাইল মিয়া ওরফে মস্তুর মেয়ে। ফারহানা মিলির বিরুদ্ধে ৬ই এপ্রিল রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলাটি করেন জেলা যুব মহিলা লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুক্তি খান। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন- ফারহানা মিলির গ্রুপের সদস্যগণ গত ২৬শে মার্চ তাকে প্রাণে হত্যার হুমকি দেয়। এ ব্যাপারে তিনি সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারণ ডায়েরি নং ১৬৮৯, তারিখ-২৯.০৩.২০১৭ইং। সেই আক্রোশে আসামি (মিলি) পরিকল্পিতভাবে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে মুক্তিখানসহ তার মামলার কতেক সাক্ষীগণকে কু-উদ্দেশ্যে একটি স্ট্যাটাস দেয়। যাতে সে লিখে-‘চরিত্রহীন যুব মহিলা লীগের কয়েকজন অতি উত্তেজিত যুবতী, যৌবনের তারণায় পত্রিকার পাতায় উক্তি লিখে মিথ্যা খবর ছাপিয়ে দেয়াকে নেতৃত্ব দেয়া বলে না, চুচ্যা ধানের বীজ ফেললে চুচ্যা ধানই ফলে। ক্ষমতার আদলে হুঁশ হারিয়ে বেহুঁশে  অযোগ্য নেত্রীরা, ভণ্ডামির চরমে পৌঁছেছে যুব মহিলালীগ’। মামলায় মিলিকে একজন উচ্ছৃঙ্খল এবং দুষ্টু প্রকৃতির মহিলা বলে উল্লেখ করা হয়। মামলা হয়েছে জানিয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগের তদন্ত করছি। পাশাপাশি আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ফেসবুকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত এক হাজার টাকার নোট আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেয়ার ঘটনায় মিলির বিরুদ্ধে আগেও মামলা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ২৬শে অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে তৎকালীন যুব মহিলা লীগের ‘কথিত’ নেত্রী ফারহানা মিলির বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মশিউর রহমান লিটন। এ মামলার পর আলোচনায় আসেন মিলি। চলতি বছরের ২৬শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ‘একতরফা’ সম্মেলনে মিলিকে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ানো মামলার আসামিকে এ পদ দেয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। জেলা আওয়ামী লীগকে না জানিয়ে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ  সম্পাদককে সম্মেলনের বিষয়ে অবহিত না করার কারণে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ সম্মেলনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে। আর এতে ভাগ্য খুলে যায় বিতর্কিত মিলির। আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের এক নেতার সুপারিশে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদটি দিয়ে দেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের এক নেত্রী। মামলার বিষয়ে মুক্তি খান বলেন- সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র এমন কোনো নেতা-নেত্রী নেই যাদের নিয়ে আপত্তিকর কথা বলে না এবং ফেসবুকে লেখালেখি করে না। এমনকি সাংবাদিকদের নিয়েও সে আপত্তিকর কথা লিখেছে। সাংবাদিকরা নাকি টাকা খেয়ে রিপোর্ট লিখে। সে পুরো যুব মহিলা লীগকে নিয়ে এ ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। আমি কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগ নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি জানিয়েছি। এদিকে মামলা দায়েরের পর মিলি তার ফেসবুকে প্রতিক্রিয়ায় লিখেছে- ‘বাহ! মুক্তি খান! চোরের মা’র বড় গলা! সিনিয়র নারী নেত্রীর ওপর হামলা! জুনিয়র নারী নেত্রীর নামে মামলা! রাজনীতির মাঠটা খুব ভালোই দখলে রেখেছিস! তুর সঙ্গ ছেড়ে দেয়ায় মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাইনা? তুর গুষ্টি তো সব বিএনপি করত! তুর গায়ের জোর বেশিই হবে! আওয়ামী লীগ এ আইসা সুযোগ নিয়া দুইটা পদ দখল করছিস! হুঁশ থাকার কথাও নয়!’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn