ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫, আহত ৪০
লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে গুলি এবং ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজের ওপর গাড়ি হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫জন নিহত হয়েছেন। হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো অন্তত ৪০জন আহত হয়েছেন। খবর রয়টার্স।স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে এবং ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজে এ ঘটনা ঘটে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা বলে আখ্যায়িত করেছে।
লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, পার্লামেন্ট ভবনের কাছে এবং ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় এ পর্যন্ত ৫জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার, হামলাকারী আততায়ী এবং তিনজন পথচারী রয়েছেন। মেট্রোপলিটান পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার মার্ক রোলি বলেছেন, এ ঘটনায় ৪০জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ফান্সের তিনজন ছাত্র এবং পাঁচজন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক রয়েছে।
যেভাবে ঘটনা সূত্রপাত: বিবিসির বুলেটিনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে লন্ডনে পার্লামেন্টের অদূরে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের কাছে একটি গাড়ি দিয়ে পাঁচজনকে চাপা দেয়। এতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই হামলাকারী পুলিশের এক কর্মকর্তাকে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে ছুরিকাঘাত করেন। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে হামলার এক বছর পূর্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে এমন ঘটনা ঘটল।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন যে হামলাকারীকে গুলি করা হয়েছে, তিনিই গাড়িতে করে আসার সময় ওই সেতুতে বেশ কয়েকজনকে চাপা দেন। পরে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরের রেলিংয়ে ধাক্কা খায় তার গাড়ি। সেখান থেকে নেমে তিনি পুলিশের ওপর হামলা করেন।
হাসপাতালে নেয়ার পর আহত এক নারী মারা গেছেন। আহত কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর আহত কয়েকজনকে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, আহত কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক কলিন অ্যান্ডারসন বলেন, একজন পুলিশ অফিসার মাথায় আঘাত পেয়ে এখানে ভর্তি হয়েছেন। তাকে কিং কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ছুরি হাতে এক ব্যক্তিকে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে দৌড়াতে দেখা গেছে। ভবনের ভেতরে থাকা পার্লামেন্ট সদস্য এবং সাংবাদিকেরা টুইটারে বিকট শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন।
পার্লামেন্টের এক কর্মকর্তা জানান, পার্লামেন্টের বাইরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে পার্লামেন্ট ভবন বন্ধ করে দেয়া হয়। হাউস কমন্সের অধিবেশন মূলতবি করা হয়। পার্লামেন্ট সদস্যদের নিজ নিজ কার্যালয়ে থাকতে বলা হয়।ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের নিন্দা: ওয়েস্টমিনস্টারে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছে ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল। মুসলিম কাউন্সিল তাদের বিবৃতিতে বলেছে ওয়েস্টমিনস্টারের ঘটনায় তারা স্তম্ভিত ও মর্মাহত। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। বিবৃতি আরো বলা হয়, হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে আঁচ অনুমান করার সময় এখনো আসেনি। হতাহতদের প্রতি আমাদের সমবেদনা। পুলিশ এবং জরুরি সেবাব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতরা যেভাবে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে তার আমরা তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, প্যালেস অফ ওয়েস্টমিনস্টার আমাদের গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা যাতে কাজ করতে পারে সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
লন্ডনে হামলায় বিশ্বনেতাদের নিন্দা ও সহমর্মিতা
লন্ডনে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন ব্রিটেন। লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে চিহ্নিত করেছে। ভয়াবহ এই হামলায় এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫ জন। আহত হয়েছেন আরো ৪০জন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এই হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। তারা সহমর্মিতার কথা জানিয়েছেন ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি। একইসঙ্গে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের লড়াইয়ে তারা সঙ্গে রয়েছেন বলেও জানান।
এ ঘটনার পর বুধবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’কে ফোন করেন। তিনি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সর্বদা ব্রিটেনের পাশে থেকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই একযোগে কাজ করার অঙ্গিকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা। এই ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি।’ দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জানান, এই হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ব্রিটেনের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও এ ঘটনায় শোক জানিয়ে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ব্রিটেনের পাশে থাকারও অঙ্গিকার করেছেন।