ব্রিটেনে হিল্লা বিয়ে: বিয়ে বাঁচাতে অচেনা লোকের সাথে রাত্রী যাপন
হালালার ক্ষেত্রে নারীকে অচেনা একজনকে বিয়ে করতে হয়, তার সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরি করতে হয় এবং তারপর তাকে তালাক দিতে হয়। আর এরপরই সে ফিরে পেতে পারে তার প্রথম স্বামীকে। তেমনি একটি ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ফারাহ। ফারাহ’র (ছদ্মনাম) স্বামীর সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিলো ২০ বছর বয়সে পারিবারিক এক বন্ধুর মাধ্যমে। এরপর বিয়ে এবং পরে সন্তান হওয়ার পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন শুরু হয় বলে জানান ফারাহ। ফারাহ বলেন, “প্রথমে নির্যাতন করতো টাকার জন্য। আমার চুল ধরে টেনে দু’রুমের মধ্য দিয়ে ঘরের বাইরে ফেলে দিতে চাইতো”। এরপরেও ফারাহ আশাবাদী ছিলেন যে অবস্থার পরিবর্তন হবেই এবং তার স্বামীর আচরণ বদলাবে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো মেসেজ পাঠিয়ে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দিলো। “আমি বাচ্চাদের সাথে বাসায় ছিলাম, আর সে গিয়েছিলো কাজে। ফোনে তীব্র তর্কের এক পর্যায়ে সে মেসেজ পাঠালো – তালাক তালাক তালাক”। আর মুসলিম বিবাহ পদ্ধতি অনুযায়ী এক সাথে তিনবার তালাক উচ্চারণ করলে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বেশিরভাগ মুসলিম দেশেরই এটা নিষিদ্ধ কিন্তু তারপরেও এমন ঘটনা হচ্ছে। আর ব্রিটেনে এটা খুঁজে বের করা মুশকিল যে কত নারী এভাবে তালাক পাচ্ছে। স্বামীর কাছ থেকে মেসেজ পাওয়ার পর ফারাহ যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে – “আমি বাবাকে পাঠাই ওটা। তিনি বললেন তোমার বিয়ে শেষ এবং তুমি আর তার (স্বামী) কাছে ফিরে যেতে পারোনা”। ফারাহ বলেন এ ঘটনায় তিনি খুবই হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু তারপরেও তিনি সাবেক স্বামীর কাছে ফেরত যেতে চান, কারণ তিনি তার জীবনের ভালোবাসা। আর সাবেক স্বামীও দুঃখ প্রকাশ করছিলেন। আর এটিই ফারাহকে নিয়ে যায় বিতর্কিত হিল্লা বিয়ে পদ্ধতির দিকে, যা এখন খুব কম সংখ্যক মুসলিমের কাছেই গ্রহণযোগ্য। যারা এটি বিশ্বাস করেন বা তিন তালাক পদ্ধতি বিশ্বাস করেন, তাদের বিশ্বাস যে আগের স্বামীর কাছে যেতে হলে তাকে অন্য কাউকে বিয়ে করে তালাক দিয়ে এরপর ফিরে যেতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই হালালা বা হিল্লা বিয়ের সার্ভিস নিতে হয় আর্থিক প্রতারণা কিংবা এমনকি অনেকক্ষেত্রে অনেকে যৌন হয়রানির শিকার হন।
মুসলমানদের বড় অংশই এখন এ ধরনের বিয়ের বিপক্ষে এবং বলা হয় যে এটার জন্য দায়ী তালাক সম্পর্কিত ইসলামী আইন নিয়ে ভুল ধারণা। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে এ ধরনের অনেক অনলাইন সার্ভিস আছে যারা অর্থের বিনিময়ে হালালা বা হিল্লা বিয়েতে সহযোগিতা করে। এমনকি এ ধরনের অস্থায়ী বিয়ের জন্য অনেক নারীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে হাজার হাজার পাউন্ড। ফেসবুকে হালালা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন করেন এমন একজনের সাথে রিপোর্টার তালাকপ্রাপ্তা মুসলিম মহিলা পরিচয়ে কথা বলার পর সেই ব্যক্তি অস্থায়ী বিয়ের জন্য ২৫০০ পাউন্ড দিতে হবে বলে জানান। এবং বলেন যে বিয়ের প্রক্রিয়া শেষ করতে তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে রাজী হতে হবে। তিনি জানান তার সাথে এ ধরনের কাজ করছে আরও কয়েকজন পুরুষ।
পরে যখন যোগাযোগ করা হয়, তখন তিনি বিষয়টি বেমালুম অস্বীকার করেন এবং বলেন যে তিনি এ ধরনের কাজে সম্পৃক্ত নন। বরং তার দাবি তিনি ফান করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে ফারাহ এমন একজন পুরুষকে খুঁজতে শুরু করেন যিনি স্বেচ্ছায় হালালা বিয়েতে রাজী আছেন। ফারাহ জানান তিনি কিছু মেয়েকে চেনেন যারা পরিবারের সমর্থন ছাড়াই গেছেন এবং কয়েক মাস ধরে ব্যবহৃত হয়েছেন। “তারা মসজিদে গেছে এবং সেখানে সুনির্দিষ্ট কক্ষে এটি সম্পন্ন হয়েছে। এরপর ইমাম বা যারা এ সার্ভিস অফার করেছে, তাদের সাথে বিছানায় যেতে হয়েছে। এবং পরে অন্য পুরুষকেও তার সাথে থাকার অনুমতি দিতে হয়েছে”। কিন্তু পূর্ব লন্ডনের ইসলামিক শরিয়া কাউন্সিল, যারা তালাক নিয়ে নারীদের পরামর্শ দিয়ে থাকে, তাদের একজন কর্মকর্তা খোলা হাসান বলছেন, “হালালা বিয়ে একটি ভুয়া বিয়ে। এটি শুধু অর্থ নেয়া আর ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের হয়রানির একটি মাধ্যম”। তিনি বলেন, “এটা হারাম, এটা নিষিদ্ধ। আমরা কাউকে হালালা বিয়েতে অনুমোদন দেইনা। যা-ই ঘটুক হালালার দরকার নেই”।
-সুত্র বিবিসি