ভয় আর আতঙ্কে সিলেটের সেই রাইসা
রফিকুল ইসলাম কামাল :: এতোটুকুন মেয়ে রাইসা। ঘাতকেরা তার চোখের সামনেই একের পর এক ছুরিকাঘাতে খুন করেছে মা ও ভাইকে। রাইসাকেও গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করতে চেয়েছিল তারা। রাইসা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর মৃত ভেবে ফেলে যায় ঘাতকের দল। পাঁচ বছরের শিশুকন্যা রাইসাকে এখন সেই ভয়ানক স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ভয় আর আতঙ্কে সময় যেন অসহ্য হয়ে ওঠেছে রাইসার জন্য। সিলেট নগরীর খাঁরপাড়ায় মিতালী ১৫/জি নম্বর বাসায় গত শনিবার দিবাগত রাতে খুন করা হয় পার্লার ব্যবসায়ী রোকেয়া বেগম এবং তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে। সুরতহাল প্রতিবেদন, ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনে তাদের শরীরে ১০৮টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন মিলেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, ভয়ঙ্কর আক্রোশ নিয়ে রোকেয়া ও রোকনের শরীরকে ছুরিকাঘাতে চিহ্নভিন্ন করা হয়েছে। সেই রাতে বাসায় থাকা রোকেয়া বেগমের শিশুকন্যা রাইসা বেগমকেও খুন করতে চেয়েছিল ঘাতকের দল; যাতে খুনের কোনো সাক্ষী না থাকে। ঘাতকের দলের কোনোও একজন চেপে ধরেছিল রাইসার গলা। অসহ্য যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়ে নিথর হয়ে পড়েছিল রাইসা। ঘাতকরা ভেবেছিল, মা ও ভাইয়ের সাথে রাইসাও মারা গেছে। কিন্তু নিথর রাইসা জেগে ওঠেছিল পরে। গেল রবিবার সকালে রোকেয়া ও রোকনের লাশ উদ্ধার এবং রাইসাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। বর্তমানে সে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছে। রাইসাকে পরম মমতায় আগলে রাখলেও ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাকে ধাওয়া করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাইসা ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আছে। কেউ এসে তাকে মেরে ফেলতে পারে, এমন ভয় পাচ্ছে সে। পুরুষদের দেখলেই আঁতকে ওঠছে রাইসা, লুকিয়ে পড়ছে সে।
সিলেট নগরীর কোতোয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) রোকেয়া বেগম যেমনটি বলছিলেন, ‘রাইসার মনে এখনো ভয় কাজ করছে। সে যে কক্ষে থাকছে, সেটির চাবি বারবার লুকিয়ে রাখছে। তার ধারণা, কেউ এসে তাকে মেরে ফেলবে। সে পুরুষ দেখলে ভয় পাচ্ছে, লুকিয়ে যাচ্ছে।’রাইসাকে মানসিকভাবে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে, মা ও ভাইয়ের খুন হওয়ার প্রত্যক্ষ করার ভয়ানক স্মৃতির বৃত্ত থেকে তাকে বের করে আনতে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব সিলেটভিউকে বলেন, ‘রাইসা এখন মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। তাকে সেই অবস্থা থেকে বের করে আনতে আমরা মনোবিদের সাহায্য নেব। বিষয়টি নিয়ে ঘটনার তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আমি কথা বলবো, যাতে রাইসার জন্য মনোবিদের সাহায্য নেওয়া হয়।’প্রসঙ্গত, মা ও ছেলে খুনের এই ঘটনায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সিলেট শহরতলির বটেশ্বর বাজার থেকে নাজমুল হাসান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে বুধবার আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। নাজমুল সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নের মুক্তিরচক গ্রামের মৃত করিম মিয়ার ছেলে।