মাদ্রাসা ছাত্ররা ইঞ্জিনিয়ার হলে রডের পরিবর্তে বাঁশ দেবে না: শিক্ষামন্ত্রী
মাদ্রাসায় থেকে পাস করা ছাত্ররা ইঞ্জিনিয়ার হলে, তারা নির্মাণকাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, এই নৈতিক শিক্ষাটি মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। শুক্রবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আরবি ভাষা ও ইসলামি জ্ঞান শীর্ষক জাতীয় এ প্রতিযোগিতায় ৮ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জেলা পর্যায়ে অংশ নেন। শুক্রবার প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের মাদ্রাসাগুলোতে প্রকৃত শিক্ষা দেয়া হয়। এখানে একই সঙ্গে বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাদ্রাসা শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা মিসর সফরের সময় দেখেছি, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিতরা কোরআন হাদিসের জ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞান প্রকৌশল বিভাগেও সমান দক্ষ হয়ে থাকে। নাহিদ বলেন, আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতরা ইসলামি জ্ঞানের সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। এজন্য তিনি বাংলাদেশে আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিতদের অলরাউন্ডার হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আহসান উল্লাহ।
উল্লেখ, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করার বেশ কয়েকটি অভিযোগ ওঠে স্থানীয় ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারদের বিরুদ্ধে।কওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয়? বাংলাদেশে প্রচলিত তিন ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষার মধ্যে মসজিদ ভিত্তিক মাদ্রাসাগুলোই মূলত কওমী মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যানবেইসের হিসেবে ১৩ হাজার ৮২৬টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৪৬০ জন। এসব শিক্ষার্থীরা যা পড়ছেন বা শিখছেন এক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির কোনোরকম সুযোগ নেই। উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরণ করে বাংলাদেশেও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা চালু রয়েছে। কওমি শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান এ শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্যই হলো ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষায় পারদর্শী হওয়া। তাদের সিলেবাসে দেখা যায় তাকমীল বা দাওরায়ে হাদিস স্তরে শিক্ষার্থীরা মূলত হাদিস সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়। আর প্রাথমিক থেকে বিভিন্ন স্তরে দেখা যায় কোরান হাদিস ছাড়াও, একাধিক ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও তর্কশাস্ত্রের মতো বিভিন্ন বিষয় তাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত আছে।
ঢাকার কওমী মাদ্রাসাগুলোর নিয়ন্ত্রক বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহসভাপতি মুফতি মাহফুজুল হক বলেন – মৌলিকভাবে কোরান হাদিস বোঝার জন্য যেসব আনুসঙ্গিক বিষয়াবলী প্রয়োজন সেগুলো পড়ানো হয়। ফেকাহ পড়ানো হয়। এর সাথে তাদের চার পাঁচটা ভাষার উপরেও তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। বাংলা, ইংরেজি প্রাথমিক পর্যায়ে, আরবি উচ্চস্তর পর্যায়ে, পাশাপাশি উর্দুও তাদেরকে শেখানো হয়। অল্প ফারসিও তাদেরকে পড়ানো হয়। মি. হকের দাবি দাওরায়ে হাদিস স্তরে শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় বিষয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি জানেন এবং শেখেন। “আমরা মনে করি যেকোনো কলেজ ইউনিভার্সিটি যেখানে ইসলামি স্টাডিজ বা আরবী সাহিত্য বিভাগ আছে, তারা এই দুই সাবজেক্টে যা পড়ে তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের এখানে ছেলেরা পড়ে। জেনারেল শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, ভূগোল, ইতিহাস বর্তমানে আমাদের এ মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়। তাছাড়া উপরের দিকে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানও আমরা পড়াচ্ছি।” কওমী মাদ্রাসার নীতি নির্ধারকরা সব সময় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি ও সনদ বাস্তবায়ন কমিটির কো চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী বলেন, তারা সরকার থেকে কোনোরকম অনুদান এবং অর্থসহায়তা গ্রহণ করেন না এবং তদারকির নামে সরকারের কোনোরকম নিয়ন্ত্রণও চান না। কওমি শিক্ষার আধুনিকায়ন বা সংস্কারের প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের কেউ নয় আলেমরাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। “এখানে ইঞ্জিনিয়ার বানানো হয় না, বৈজ্ঞানিক বানানো হয় না, ডাক্তার হয় না, দার্শনিক হয় না। ইসলামি শিক্ষার মধ্যে গভীর জ্ঞানী হয়। এটা একটা বিভাগ যেখানে ইসলামী শিক্ষায় গভীর জ্ঞানী করে তোলা হয়।
সরকারি স্বীকৃতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শিক্ষা বা আরবী বিভাগের মাস্টার্স এবং কওমি মাদ্রাসার দাওরায় হাদিস সদনের মান সমান হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. ইউসুফ জানান সিলেবাসে খুব একটা পার্থক্য নেই। তিনি মনে করেন মান পাওয়ার পর নিজেদের স্বার্থেই কওমী শিক্ষায় কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন। “দাওরায়ে হাদিসে তারা সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের ছয়টি কিতাবগুলো তারা পড়ায়। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। আলিয়া মাদ্রাসাতেও এরকম কামিল যখন এমএ’র মান ছিলনা তখন সিহাহ সিত্তাহ’র কিতাব পড়ানো হতো। যখন এটাকে এমএ’র মান দেয়া হয় তখন এই কামিলকে কামিল হাদিস, কামিল আদব, কামিল ফিকহ, কামিল তাফসির এধরনের বিভাজন করা হইছে। কওমি মাদ্রাসার দাওরা সিলেবাসকে এভাবে বিভাজন করে আপডেট করতে পারে এতে কোনো অসুবিধা নাই।” “ওনারা নিজেরাই বিভাজন করে আপডেট করতে পারে এখানে সরকারের ইনভলবের কোনো দরকার নাই। বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের মধ্যে নিয়ে তারা করুক অসুবিধা কি? আমি মনে করি পরিবর্তন দরকার তা নাহলে এই মানের কোনো ফায়দা হবে না।”