আশরাফুল মামুন- বছরজুড়ে চলা মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের অভিযানে আটক এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাজা ভোগ করছেন প্রায় ১৬৭৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী। এই ১৬৭৮ জন আছে জেলখানা ও ডিটেনশন ক্যাম্পে। এদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে আটকের সংখ্যাই বেশি। অনেকের  জেলখানায় সাজা শেষ করে দেশটির বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। জনশ্রুতি আছে সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো আচরণের কারণে বন্দিরা মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বৃহস্পতিবার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল জাজাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে বলেন, ২০২০ সালে বিভিন্ন দেশের ১০৫ জন বন্দি মারা গেছেন এর মধ্যে ৩ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। এই ৩ জন কেন আটক হয়েছেন কিংবা কীভাবে মারা গেছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই।

যতদিন ভেতরে থাকবে ততদিন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে ভেতরে বন্দিদের সঙ্গে আদতে কী হচ্ছে বাইরে এসে কেউ প্রকাশ করতে চান না। অনেকের অনেক সময় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যথাসময়ে নিজ দেশে ফেরত  যেতে পারেন না বিভিন্ন জটিলতার কারণে। যেমন, পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণাদির অভাব, পাসপোর্ট আছে মেয়াদ নাই, আবার কারও সঙ্গে কোনো ডকুমেন্টসই নাই, নিজ খরচে বিমানের টিকিট করতে না পারা, নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দূতাবাস থেকে যে ডকুমেন্টস পাঠানোর কথা তা সময়মতো পাঠানো হয় না। অনেক সময় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তবে দূতাবাস বলছে দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যারা পাসপোর্ট ছাড়া আটক হন তাদের তথায় ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাতে হলে আগে দেশ থেকে তার নিজ এলাকার প্রশাসন থেকে প্রমাণ জোগার করতে অনেক সময় লেগে যায়।  আবার দেখা গেছে সব ডকুমেন্টস আছে কিন্তু  টিকিট কেনার পয়সা নাই।  সরজমিন খোঁজখবর ও বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় আটকের পর সাজা হলে ঘাটে ঘাটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ডকুমেন্টস সংগ্রহ সহ নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কারণ যে লোকটা জেলে বন্দি আছে মালয়েশিয়ায় তার কোনো স্বজন নেই এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোন সংযোগ নেই সে কীভাবে দূতাবাস থেকে তার ডকুমেন্টস সংগ্রহ করবে? আবার বিমানের টিকিট ক্রয় করবে? 

এসব অসংগতির কারণেই প্রত্যাবর্তন মাসের পর মাস বছর পর্যন্ত গড়ায়। যখন সে খালি হাতে ধরা পড়লো সে কোথায় পাবে টিকিট কেনার হাজার হাজার রিংগিত? তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন বন্দিদের যেন সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নেয়া হয়।  যেমনটি করেছেন গত সপ্তাহে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। জান্তা সরকার সামরিক বিমান পাঠিয়ে তার দেশের জেলবন্দিদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। নাম পপ্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,  অবৈধ হয়ে কিংবা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক হলে প্রথমে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে রাখা হয়।  তারপর ১৪ দিন শেষে আদালতে হাজির করে সাজা ঘোষণা করার পর জেলখানায় সাজা ভোগ করতে হয়। জেলখানার সাজা শেষ হলেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশে ফেরার অপেক্ষায়।

দূতাবাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে এ বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি পরে নাম প্রকাশ করার শর্তে রাজি হয়ে তিনি বলেন, যাবতীয় প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে। যাদের ভ্যালিড পাসপোর্ট আছে তাদের ইমিগ্রেশন সরাসরি দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়, এ ক্ষেত্রে হাইকমিশনে কোনো কাজ নেই। এরমধ্যে কেবল যাদের  ভ্যালিড ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই বা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে ট্রাভেল পারমিট দরকার তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাভেল পারমিট টিপি প্রস্যু করা হয়। মালয়েশিয়ায় মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক অনেক সময় বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাভেল পারমিট নেয়ার আবেদন করে। তাদের আবেদন যাচাই করে বাতিল করে দেয়া হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়া এবং নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল না থাকায় দেশে ফেরত প্রেরণ অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব হয়।

এদিকে. সংশ্লিষ্ট বন্দিদের আত্মীয়স্বজনরা সরকারের কাছে দাবি করেছেন বাংলাদেশি বন্দিদের সরকারি খরচে যেন নিজ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn