মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দুঃখগাথা
প্রত্যেক বছর মালয়েশিয়া থেকে হাজার হাজার বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক দেশে অর্থ পাঠান। দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখেন তারা। পরিবার, বন্ধু ও দেশের জন্য এই শ্রমিকরা আত্মোৎসর্গ করলেও প্রতিদানে যা পান তা না বললেও চলে। এশিয়া নিউজ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কিছু শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে তাদের আত্মোৎসর্গের অভিজ্ঞতা, প্রতিদান ও দেশের অর্থনীতিতে অবদানের বিষয়ে তুলে ধরেছে। একটি বিষয়ে এই শ্রমিকরা একমত হয়েছেন যে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ নেই। এজন্য দেশে না খেয়ে থাকার চেয়ে বিদেশে সৎ কাজ নেয়াকেই তারা সর্বোত্তম হিসেবে মনে করেন। মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক রয়েছে। নির্মাণ শ্রমিক, নিরাপত্তারক্ষী, দোকানদার ও ক্লিনার হিসেবে কাজ করেন এই শ্রমিকরা। এদের অনেকেই নথিভূক্ত নন এবং অবৈধ হিসেবে কর্মরত। যারা সৎ ও ভালো কাজ করছেন; তারা বাড়ি ফিরে পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক আশীর্বাদে পরিণত হন।
এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উজ্জল রায়; আট বছর ধরে কুয়ালালামপুরে বসবাস করে আসছেন তিনি। এই সময়ে মালয়েশিয়ায় তিনি উপার্জন করেছেন প্রায় ১৬ লাখ ৫ হাজার ৫০ টাকা। রায় বলেন, আমি দেশে ছোট্ট এক খণ্ড জমি কিনে একটি বাড়ি করেছি। যশোর জেলার বাসিন্দা উজ্জল রায়; মালয়েশিয়ার রাজধানী চার্চের একটি গেস্ট হাউসে কাজ করেন তিনি। প্রত্যেক দুই বছর পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দেশে ফিরেন রায়। নিয়োগকর্তা হরম্যান শরস্থির কাছে উজ্জল একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী। হরম্যান বলেন, তিনি (উজ্জল রায়) সৎ এবং সময়নিষ্ঠ, সঠিকভাবে কর্তব্যপালন করেন। ঢাকার মহসিনের আলমের গল্পও একই ধরনের। কুয়ালালামপুরের একটি হোটেল বারে কাজ করেন তিনি। মহসিন বলেন, ২০ বছর আগে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। কারণ বাংলাদেশে আমার চাকরি ছিল না। ভালো ভবিষ্যৎ গড়তে মালয়েশিয়ায় চেষ্টা করছেন তিনি।
পুরনো দিনের কথা স্মরণ করে বলেন, মালয়েশিয়ায় তার শুরুটা তেমন সহজ ছিল না। আমি অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছি। আমাকে ভাষা শিখতে হয়েছে এবং চাকরি খুঁজতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমি প্রতিষ্ঠিত এবং প্রত্যেক মাসে ভালো বেতন পাই। এই অর্থ দিয়ে স্ত্রী, ছেলে এবং বাবা-মার ভরণপোষণ চলে। বেশ সাবলম্বী জীবন-যাপন করলেও অকপটে দেশে তার দুঃখ ও অনুশোচনার কথা স্বীকার করেন। বলেন, বাংলাদেশে কোনো কাজ নেই, অনেক সমস্যা, অতিরিক্ত জনসংখ্যা আছে। তবে মালয়েশিয়া যে অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তার ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে তাকে। প্রায়ই নিয়মিত বেতন পান না তিনি। মালয়েশীয় রিঙ্গিতের মান কমে গেছে, অনেক নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের সঠিক সময়ে বেতন দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর পরও আমি মালয়েশিয়ায় বসবাস করতে চাই, কারণ বাংলাদেশের চেয়ে এখানে বসবাস করা সব সময়ই উত্তম।