দীপ্তেন্দো সেন(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে)-

বাসার সামনে বাঁশ দিয়ে বানানো বেড়া। বাসা ও বেড়ার মাঝখানে একটু খানি ফুলের বাগান। যেখানে ফুটে থাকতো নাইন ওক্লক, রক্ত জবা, বেলি, তাঁরা ফুল আর লাল গোলাপ। দাদু ঠাপ্পা লাঠি দিয়ে কয়েকটা ফুল পেরে নিয়ে আসতেন পূজোর জন্য। বাকীগুলো রাঙ্গিয়ে রাখতো সারাদিন বাগানকে। ক্লাস ওয়ান বা টুতে ভর্তি হইনি। মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম মায়ের সাথে। মায়ের স্কুলে। রাজগোবিন্দ প্রথমিক বিদ্যালয়। যেদিন যেতাম, সেদিন আমার আনন্দ কে দেখে। বঙ্কিম স্যার ( কাকু), পীর স্যার ( চাচা) বাদাম খাওয়াতেন। ম্যাডামরাও আদর করতেন। তাদের ক্লাসে বসাতেন। দাদু যিনি ঐ স্কুলের হেড মাষ্টার ছিলেন, আমার স্কুলের নাম দিয়েছিলেন ইচ্ছামতি স্কুল। বাবা চাকরী করতেন চিটাগাং। সরকারী চাকুরী। বন্ধের সময় আমরা যেতাম। আর ছুটি নিয়ে বাবা আসতেন। বাসায় আসলে আনন্দ বেড়ে যেত।  আমদের তিন ভাইকে বড় করে তুলা, দেখাশুনা বা পড়াশুনা সবই মা একা সামলেছেন। ।

নয়টা বাজার সাথে সাথেই সবাই রওনা হতেন স্কুলের দিকে। দাদু, মা, পিশি, মনি ভাই সবাই। আমিও যেতাম মায়ের সাথে। ছোট ভাই রাজা তখনও খুব ছোট। কোন কোন দিন যদি জ্বর টর আসতো তখন বাসায় থাকতে হতো। আলো পিশি ( স্বর্গীয়) ও কাজের দিদির কাছে। মা’কে বলতাম আমিও স্কুলে যাব। কিন্তু জ্বর হলেতো যাওয়া যাবে না। তা বুঝেও বারবার বলতাম। মা আমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে, সব কিছু দিয়ে বের হয়ে যেতেন।

মা হয়তো জানেন না, বাগানের বেড়া ধরে, সে সময়ে তাঁর পথ পানে ছলছল দুটো চোখ চেয়ে থাকতো। বাসা থেকে যতদূর দেখা যায়। ঘরে যেতে ইচ্ছে করতো না। ঘরে গেলেও মায়ের দেয়া পাউডারের গন্ধ পেতাম। যে হাতে সকাল বেলায় ভাত খাওয়াতেন। সে গন্ধ। লেগে থাকতো সারা বেলা। মায়েরও হয়তো চোখ ছলছল করতো আমাকে বাসায় রেখে যেতে। তা আগে বুঝতাম না। আমার ঘরে যে এখন ছোট্ট মা আছে। বাসায় ঢুকলেই মামনিটা আমাকে ঝাপটে ধরে। আদর করে। তাই বুঝতে পারি দিনক্ষণ ঠিক করে মাকে ভালবাসার কথা বলতে হয় না। মা আজ বিছানায়। Femoral Neck অপারেশন হয়েছে। আমার ডাক্তার বন্ধু বাকীবিল্লাহ তিন মাসের বেড রেষ্ট দিয়েছে মাকে। মা সুস্থ হয়ে আগের মত করে হাটবেন, ঘুরে বেড়াবেন। নাতি নাত্নিকে আদর করবেন। উৎকণ্ঠিত থাকবেন ছেলেদের, বৌমাদের জন্য। আজ এ কামনাই করি। জগতের সকল মায়েদের প্রতি থাকলো হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn