মা ও শিশুর মৃত্যু : যা ঘটেছে সিলেট কমিউনিটি বেজড হসপিটালে
সিলেট:: সিলেট কমিউনিটি বেজড হসপিটালে একদিনের ব্যবধানে মা ও শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত সাকেরা বেগমের স্বামী সাব উদ্দিন হসপিটাল কর্তৃপক্ষের প্রতি অবহেলার অভিযোগ আনলেও তার কথায় রয়েছে অনেক গড়মিল। জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই এলাকার সাব উদ্দিনের স্ত্রী সাকেরা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে বিকেল ৩টার দিকে নগরীর সুবহানীঘাটস্থ সিলেট কমিউনিটি বেজড হসপিটালে তাকে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির সময়ই সাকেরা বেগমের অবস্থা শোচনীয় এবং চিকিৎসা ব্যয়বহুল হবে দেখে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ সাকেরাকে অন্যত্র ভর্তির পরামর্শ দেন। কিন্তু এতে সাব উদ্দিন সম্মত হননি। অপারেশনের আগে সাব উদ্দিনের কাছ থেকে লিখিত অনুমতিও নেয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে সেটি অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে, অপারেশনের আগেই সাকেরার গর্ভে সন্তান মারা যায়। মৃত সন্তানকে সিজার ছাড়া প্রসব করানোর চেষ্টা করে কর্তব্যরত ডাক্তাররা পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে অপারেশন করেন। এর আগে সাকেরার জরায়ু ফেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। যে কারণে সাকেরার অবস্থাও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। অপারেশনের পরপরই তাকে আইসিইউ-তে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং স্বামী সাব উদ্দিনের সঙ্গে পরামর্শ করেই সাকেরাকে আইসিইউ-তে নেয়া হয়। কিন্তু সিলেট কমিউনিটি বেজড হসপিটালের চিকিৎসকদের সব রকমের চেষ্টার পরও সাকেরা বেগম রোববার (২০ ডিসেম্বর) সকালে চলে যান না ফেরার দেশে। স্ত্রীর মৃত্যুর পরপরই শোকাহত সাব উদ্দিন ডাক্তার, নার্স ও হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে দোষারূপ করতে থাকেন।
তবে হসপিটালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোর্শেদ আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন, রোগীকে নিয়ে আসাই হয় শোচনীয় অবস্থায়। আমাদের কর্তব্যরত ডাক্তাররা প্রাথমিক পরীক্ষার পর সন্তান মৃত বলে অভিভাবকদের জানাই এবং রোগী চিকিৎসা ব্যয়বহুল উল্লেখ করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেই। তখন সাব উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনের জায়গা-জমি বিক্রি করে এনে টাকা দিবো- দ্রুত আমার স্ত্রীর অপারেশনের ব্যবস্থা করুন।
মোর্শেদ আহমদ জানান, আমাদের এখানে আসার আগেই সন্তান নিচের দিকে নেমে গিয়ে সাকেরার জরায়ু ফেটে যায় এবং সন্তান মারা যায়। এছাড়াও সাকেরার অত্যন্ত মারাত্মক পর্যায়ের ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। আমরা বিষয়টি সাব উদ্দিনকে বুঝিয়ে বলার পর উনি অপারেশনের তাগাদা দিলে সন্তান প্রসব করানো ও জরায়ু অপারেশনের জন্য তার কাছ থেকে আলাদাভাবে দুটি লিখিত অনুমতি নেয়া হয়। অনুমতিপত্রে তিনি স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি অবিশ্বাস্য রকমের মিথ্যাচার করে আমাদের দোষারূপ করতে থাকেন।
এদিকে, স্ত্রীর মৃত্যুর পর রোববার টাকা ছাড়া মৃতদেহ না দেয়ার অভিযোগ করেন সাব উদ্দিন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা গ্রহণ ছাড়াই মৃতদেহ দিয়ে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এ.এস.আই রহিম উদ্দিন সিলেটভিউ-কে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকান নেননি। সাব উদ্দিনের একদিকে স্ত্রী, অন্যদিকে সন্তান মারা যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাছাড়া আমার রিকুয়েস্ট এবং উপস্থিতিতে সকল টাকা বকেয়া রেখে রোববার স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি চলে যান সাব উদ্দিন।