মা শেখ হাসিনা
নিউজ ডেস্ক : শুধু দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, শেখ হাসিনা একজন মমতাময়ী মা-ও। এই মাকে স্বামীহারা স্ত্রী কিংবা বাবাহারা সন্তানের কষ্ট নির্মমভাবে স্পর্শ করে। রাজ্যের সব সমস্যা মাথায় নিয়েও তিনি যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের খবরও রাখেন তার প্রমাণ বার বারই পেয়েছে দেশবাসী। গর্বিত মা শেখ হাসিনার সুযোগ্য উত্তরসূরি সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বড় ছেলে জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা আর মেয়ে পুতুল বাংলাদশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। গর্বিত মা হিসেবে বরাবরই শেখ হাসিনা নিজ সন্তানদের সাফল্যে আনন্দিত হয়েছেন। ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মত প্রবর্তিত ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। একই অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মা শেখ হাসিনা।
আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ছেলের পুরস্কার পাওয়াতে অন্য সব মায়ের মত শেখ হাসিনাও ছিলেন উচ্ছ্বসিত। ওইদিন ঐ অনুষ্ঠানে সেই অনুভূতি প্রকাশেও কোনো কার্পণ্য করেননি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জয়ের কাছ থেকেই আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি। এজন্য সে আমার শিক্ষক। শুধু তাই নয়, তথ্য-প্রযুক্তির সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মেহনতি মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, তার মন্ত্র এসেছে জয়ের কাছে থেকে। এমন সন্তানের মা হতে পেরে আমি গৌরবান্বিতবোধ করছি।’
এর আগে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২০০৭ সালে ‘ইয়াং গ্লোবাল লিডার’ নির্বাচন করেছিল ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই সম্মান পান তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়া এই মেধাবী বাঙালি ভারতের ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটনেও কম্পিউটার প্রকৌশল পড়েন জয়। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট থেকে লোক প্রশাসনে স্নাতকোত্তর করেন।
ছেলের জন্ম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছিল। তেমনি সময়ে জয়ের জন্ম। সে সময় আত্মীয়-স্বজন কাউকে পাশে পাইনি। আর জয় যখন হার্ভার্ডে, তখনও বাংলাদেশে জরুরি অবস্থার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে নিজের বন্দি থাকার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এর প্রত্যুত্তরে জয় বলেছিলেন, আমার মা তার কষ্টের কাহিনী বললেন, আমার জন্মের সময়ের অসহনীয় দুর্দশার দিনগুলো তিনি ভোলেননি।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের মত শেখ হাসিনার আরেক সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও এখন বিশ্ব দরবারে আলোচিত এক নাম। অটিজম মোকাবেলায় বাংলাদেশের এগিয়ে চলা তারই নেতৃত্বে। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। প্রথমে নিজ দেশ বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় তিনি কাজ করেন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত আছেন। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দুই সন্তানসহ গর্বিত মা
পুতুল ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিকেল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তে যে মানব ভালোবাসা এবং মুক্তির বারতা বহমান ছিল, তার প্রমাণ মেয়ে এবং নাতি-নাতনিদের এগিয়ে চলা।