মুকুট না মানিক? এ নিয়ে আটকে আছে জেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যন নূরুল হুদা মুকুট না সুনামগঞ্জ ৫ ছাতক দোয়ারা আসনের সাংসদ মহিবুর রহমান মানিক কে হবেন জেলা আওয়ামীলীগের নতুন গঠিত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ নিয়ে দলের সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি আলহ্বাজ মতিউর রহমান ও সাধারন সম্পাদক ব্যারিষ্টার এম, এনামুল কবীরের মতোবিরোধে আটকে আছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দূরত্ব কিছুটা কমলেও আলোর মুখ দেখতে পারছেনা পূর্ণাঙ্গ কমিটি। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজধানীর একটি আবাসিক হোটেলে প্রায় ৪ ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দেওয়া আলাদা-আলাদা কমিটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় অনেক বিষয়ে সভাপতি ও সম্পাদক দুইজনেই ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে সিনিয়র সহসভাপতি পদে জেলাআওয়ামী লীগের সভাদতির দাবী সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট এবং সাধারণ সম্পাদক ইমন দাবী করছেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে। এ বিষয়ে কেউই ছাড় দিতে নারাজ।একইভাবে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক পদে সভাপতি চান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীমকে কিন্তু সাধারণ সম্পাদক চান সাবেক প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নান্টু রায়কে। মঙ্গলবার ফার্মগেটের একটি আবাসিক হোটেলে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনসহ দুই নেতার বৈঠকে অনেক বিষয়েই ঐকমত্য হয়েছে। এই নিয়ে কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ তিন দফায় বৈঠক করলেন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এই দুই নেতা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন,‘আরেক দফায় জেলা আওয়ামী লীগের দুই দায়িত্বশীল নেতা বৈঠক করবেন। ঐ বৈঠকেও এই দুই পদে ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে দলীয় সভানেত্রীর কাছে এই দুই পদে দুটি করেই নাম যাবে এবং সভানেত্রী এই দুই পদে কারা থাকবেন তা নির্ধারণ করবেন।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ প্রায় ২০ বছর কেটেছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সম্পাদক দিয়ে। এই দীর্ঘ সময়ে জেলার বেশিরভাগ উপজেলায়-ই সংগঠন ছিল দ্বিধাবিভক্ত। ২০ বছর পর ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘটা করে সম্মেলন করে সভাপতি ও সম্পাদকের দুই পদ ঘোষণা হয়। সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস দুই পদের (সভাপতি ও সম্পাদক) সমন্বয় থাকলেও গত প্রায় ৯ মাস হয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু’র মতো ছিলেন। অর্থাৎ সভাপতি ও সম্পাদক দুজনেই উল্টোপথে হেঁটেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে এই দূরত্ব কিছুটা কমলেও নিজের মুঠো আলগা করতে চাচ্ছেন না কেউই। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনকে ঘিরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দূরত্ব তৈরি হয়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থিত প্রার্থী ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ঐ সময় কেন্দ্রে নালিশও করেন। এরপর থেকে সুনামগঞ্জের ৫ সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসনসহ) ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন একপক্ষে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট আরেক পক্ষের হয়ে কাজ করছেন। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে জেলার প্রায় সব কয়টি সাংগঠনিক ইউনিটে।
বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন দুইজনেই বলেছেন,‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। এর আগে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চাই।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মঙ্গলবারের দীর্ঘ বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন,‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে। এটি মাথায় রেখেই আমরা দলকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করতে চাই। অনেক বিষয়েই আমরা একমত হয়েছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। আগামীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আমরা একসঙ্গে সভা করবো।’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন বলেন,‘দল এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে দলের প্রয়োজনেই। দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী করতে সংসদ সদস্য এবং দলের সমন্বয় রাখা চাই। আমরা সেভাবেই এগুচ্ছি। জেলা কমিটি গঠন নিয়ে কয়েক দফায় আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বসহ বৈঠক করেছি। মঙ্গলবারও বৈঠক হয়েছে।’